অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

টিকা নেওয়ার পর অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছেন? জেনে নিন প্রতিকার

হেল্থ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০২১ রোববার   আপডেট: ১২:৫২ এএম, ১৬ আগস্ট ২০২১ সোমবার

করোনা কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন। ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ ভ্যাকসিন নেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বহুদিন ধরে। তবে, এতেও যেন শান্তি নেই। ভ্যাকসিন গ্রহণের পরেও মানুষের নানান দৈহিক সমস্যা থেকে রেহাই নেই।

সম্প্রতি, শিংলস নামক অ্যালার্জির খোজ মিলেছে কিছু মানুষের মধ্যে। শিংলস, বা হারপিস জোস্টার (এইচজেড), একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা বেদনাদায়ক ফুসকুরি সৃষ্টি করে। কিছু ক্ষেত্রে কোভিড টিকা দেওয়ার পরে মানুষ রিপোর্ট করেছেন এই অ্যালার্জি সম্পর্কে ।

ডা. সৌরভ শাহ (চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ভাটিয়া হাসপাতাল, মুম্বই) জানান, কোভিড টিকাগ্রহণের পরবর্তী সময়ে চার থেকে পাঁচ মাসের বিরতিতে এক মাসে ১০ জনের মধ্যে শিংলস-এর সংক্রমণ লক্ষ্য করেছেন। গত বছর সংক্রমণের শীর্ষে তিনি এই অ্যালার্জি সমস্যার বৃদ্ধি টের পেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, আগে চর্মরোগ সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের এবং ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যেত।

চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, অ্যালার্জির রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ এমনও হতে পারে যে কোভিড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, নেট ইমিউনিটি কমে যায়। এইচজেড একই ভাইরাসের কারণে হয়- ভেরিসেলা জোস্টার-চিকেন পক্স ঠিক যে কারণে হয়। 

ছোটবেলায় অনেকেই চিকেন পক্সের টিকা নিয়েছেন সেখান থেকেই ভাইরাসটি ডোরসাল রুট গ্যাংলিয়নে সুপ্ত আকারে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, এটি সক্রিয় হয় এবং ত্বকে ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। সংশ্লিষ্ট ডার্মাটোম (ত্বক) কে প্রভাবিত করে। যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকা এইচজেড সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ত্বকের ভেতরের অংশে জ্বলুনি সৃষ্টি করে।

শরীরের কোন কোন স্থানে এটি হতে পারে ?

শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. নিপুন জৈন বলেন, যদিও ভ্যাকসিন এবং শিংলস-এর মধ্যে কোনও সুস্পষ্ট সম্পর্ক নেই তারপরেও সাধারণত শরীরের একপাশে বেদনাদায়ক এই ফুসকুড়ি যা মুখ, চোখ, বুকের ক্ষেত্র এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিতে হতে পারে। এছাড়াও, যেহেতু এটি সংবেদনশীল স্নায়ুগুলিকে প্রভাবিত করে তাই অনেক রোগী ফুসকুড়ি বা ফোস্কা আপাত উপসর্গের পরিবর্তে শুধুমাত্র ব্যথা নিয়ে বিভ্রান্তির শিকার হতে পারে। সাধারণত, এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে প্রকট হয়। তবে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুদেরও সম্ভাব্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল ভ্যাকসিন রিসার্চে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র তুরস্কে ৬৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির কেস নিয়ে গবেষণা করেছে। যেখানে করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজের পাঁচ দিন পর তিনি তার বুকের ডান দিক থেকে স্টিংসিং সেনসেশন এবং ব্যথার কথা জানিয়েছেন। 

শারীরিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিন গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক পিনহেড ভেসিকুলার ক্ষত প্রকাশ পায়। সোজা কথায়, ভ্যাকসিন কোষ-মধ্যস্থ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে এবং এটি এইচজেডের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

যদিও এর সঠিক কারণটি এখনও জানা যায়নি। টিকা-প্ররোচিত ইমিউনোমোডুলেশন লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাকসিন এবং নিষ্ক্রিয় টিকা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষয়প্রাপ্ত এলোরেক্টিভিটি পুনরায় সক্রিয়করণের জন্য দায়ী প্রক্রিয়া হতে পারে। টিকা এবং হারপিস ভাইরাস সংক্রমণের পুনরায় সক্রিয়করণের মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগ স্পষ্ট করার জন্য এপিডেমিওলজিক্যাল স্টাডিজ প্রয়োজন।

প্রতিরোধ:

* এর সঠিক কোনও চিকিৎসা বা ওষুধের প্রভাব সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। তবে যারা ক্যানসার এবং ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগে ভুগছেন তাদের কিন্তু এই বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণে সচেতন হওয়া উচিত।
*  স্বাস্থ্যকর খাবার, পুষ্টি, শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ভুলবেন না।

কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত ?

চিকিৎসকদের মনে রাখা উচিত, যে এইচজেড প্রতিরোধ করার জন্য অনাক্রম্যতা চাবিকাঠি। কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে, মানবদেহ কয়েক সপ্তাহের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে যেহেতু শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করছে। কিছু মানুষ যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করে তাদের দুর্বল ইমিউন সিস্টেম থাকতে পারে যা ভ্যাকসিনের কারণে আরও কিছু সময়ের জন্য হ্রাস পায়।

ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে নিশ্চিত করুন যে, আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ ভাল। পুষ্টিকর খাবার খেয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুমের মাধ্যমে নিজের শরীর সুস্থ রাখুন। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করুন। যদি থাইরয়েড অবস্থা অস্বাভাবিক হয় তাহলে সেটি আয়ত্ত্বে আনা প্রয়োজন। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলির চিকিৎসা করা দরকার ভীষণ মাত্রায়।

চিকিৎসা: 
সাধারণত শিংলস-এর টিকা তাদের জন্য যারা থাইরয়েড এবং ডায়াবেটিসে ভুগছেন। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সুস্থ রাখতে এটি প্রায় ১০ বছর কাজ দেয়। সাধারণত রোগীরা এইচজেড থেকে এক বা দুই সপ্তাহের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু এইচজেড দ্বারা সৃষ্ট ব্যথা ফুসকুড়ি নিরাময়ের পরেও কয়েক সপ্তাহ ধরে শরীরে থাকতে পারে।