অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কিশোরগঞ্জ থেকে অপহরণ, কুমিল্লায় হত্যা, চট্টগ্রামে লাশ

রাজিব শর্মা, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ১০ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার  

কিশোরগঞ্জ থেকে অপহরন করে মাঝ রাস্তায় খুন করে চট্টগ্রামের পটিয়ায় লাশ ফেলা হয় নবী হোসেন নামে এক ব্যক্তির। প্রথমে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে পুলিশ মৃত দেহ উদ্ধার করেন। পরে অত্যাধুনিক ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন এন্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম এর মাধ্যমে ভিকটিমের পরিচয় জানার পর হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে পুলিশের চৌকস টিম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম।

অবশেষে দীর্ঘ ১০ মাস আগে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচন করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা। রবিবার (৮ আগস্ট) হত্যা মামলার প্রধান আসামী আশরাফুল হক প্রকাশ সাব্বির (২৩) ও তার মা শিউলী বেগম (৪৫) কে আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম। আর তাদের গ্রেফতারে মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে পরকিয়া প্রেম ও হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পিবিআইর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মায়ের সঙ্গে পরকীয়ার কারণে প্রেমিক নবী হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে ছেলে আশরাফুল হক প্রকাশ সাব্বির ও তার ভাড়াটে খুনিরা। নিহত নবী হোসেন (৩০) এর বাড়ি ভৈরব উপজেলার আগানগর গ্রামে এবং তার বাবার নাম মো. ইসমাইল বলে জানা যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. মনির হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, মোবাইলের প্রযুক্তির সাহায্যে গত শনিবার রাতে আশুগঞ্জের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মা-ছেলেকে গ্রেফতার করেছি। গত বছর ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনাটি ঘটে। এরপর থেকে হত্যাকারীরা পলাতক ছিলেন।

তিনি জানান, শিউলী বেগমের স্বামী আনোয়ার হোসেন সৌদি আরব প্রবাসী। স্বামীর অনুপস্থিতিতে বন্ধু নবী হোসেনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এরই মধ্য ওই নারী তার স্বামী আনোয়ারকে তালাক দিয়ে নবী হোসেনকে বিয়ে করেন। মায়ের অসম প্রেম ও দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনাটি সহ্য করতে পারেননি তার পুত্র সাব্বির। তাই পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় মায়ের দ্বিতীয় স্বামী নবী হোসেনকে হত্যা করার।


সাব্বিরের পরিকল্পনামত গত বছরের ১৫ অক্টোবর ভাড়াটে খুনি দিয়ে নবী হোসেনকে অপহরণের চেষ্টায় ব্যর্থ হলে পরদিন ১৬ অক্টোবর কৌশলে নবী হোসেনকে দাওয়াতের কথা বলে একটি প্রাইভেটকারে তুলে কুমিল্লায় নিয়ে চলন্ত গাড়িতে তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। এ সময় গাড়িতে সাব্বিরের ভাড়া করা তিন খুনি তুষার, সুমন ও আশিক হত্যায় অংশ নেয়।  তারপর নবী হোসেনের লাশ নিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসে তারা।  চট্টগ্রাম থেকে একই গাড়িতে কক্সবাজার যাবার পথে মহাসড়কের পটিয়ার মনসা আইডিয়াল স্কুলের পূর্ব-উত্তর পাশে ব্রীজের নীচে নবীর লাশ ফেলে দিয়ে গাড়ি টানিয়ে তারা কক্সবাজার চলে যান।

পিবিআই’র এ কর্মকর্তা আরও জানান, খুনিরা কক্সবাজার থেকে ভৈরব ফেরত যাওয়ার পর হত্যার পরিকল্পনাকারী সাব্বির গাড়ী ভাড়া বাবদ ১৫ হাজার, খুনের জন্য পূর্বের চুক্তি মোতাবেক ৬০ হাজার টাকা আসামী তুষারকে পরিশোধ করেন। তুষার তার প্রাপ্ত টাকা থেকে সুমনকে ১৭ হাজার) এবং আশিককে ১৮ হাজার টাকা প্রদান করে এবং তুষার নিজের কাছে ২৫ পঁচিশ হাজার টাকা রাখেন।

এদিকে ঘটনার পরদিন পটিয়া থানার পুলিশ জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পকেটে থাকা আইডি কার্ড সনাক্ত করে নিহতের পরিবারকে ভৈরব থানার মাধ্যমে খবর দেয়। খবর পেয়ে তার ভাই কবির হোসেন চট্টগ্রাম পটিয়া গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। এরপর ভাই কবির হোসেন বাদী হয়ে পটিয়া থানায় ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করতে চট্টগ্রামের পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

পিবিআই মামলাটি তদন্ত নেয়ার পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে প্রাইভেটকার চালক আশিক ও সহকারী সুমনকে গত বছর ২৩ অক্টোবর ভৈরবের দুটি বাসা থেকে গ্রেফতার করেন। এরপর গ্রেপ্তারকৃতরা চট্টগ্রাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার ঘটনাটি স্বীকার করেন। চট্টগ্রাম আদালতে তারা কীভাবে নবী হোসেনকে গাড়ির ভিতর হত্যা করে পটিয়ার জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে আসে সেই ঘটনার বর্ণনা দেন। এভাবেই নবী হোসেনের খুনের ঘটনাটি পিবিআই চট্টগ্রাম উদঘাটন করেন।

মামলার বাদী নিহত নবী হোসেনের ছোটভাই কবির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পনা করে নির্মমভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে খুনিরা হত্যা করেন। ৭ আগষ্ট শনিবার গভীর রাতে পিবিআই পুলিশ প্রধান খুনি সাব্বিরসহ তার মাকে গ্রেফতার করেছে শুনেছি। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।

পিবিআই আরো জানায়, মা-ছেলেকে গ্রেফতারের পর ৮ আগস্ট রবিবার চট্টগ্রামে এনে আদালতে হাজির করলে আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে।