অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

করোনার প্রভাব, বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিতে বিপাকে চরাঞ্চলের মানুষ

সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম 

প্রকাশিত: ০৩:২৬ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২১ শনিবার  

বন্যা প্রবণ কুড়িগ্রামের নদ-নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে গত এক সপ্তাহে আবারো দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন । নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে জেলার উলিপুরের বজরা, বেগমগঞ্জ, হাতিয়ার নদী সংলগ্ন এলাকাসহ তিস্তা ও চিলমারীর ১৮ টি পয়েন্ট। 

এ জেলার চরাঞ্চলেরমানুষগুলো প্রতিবছর বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্ততি নিয়ে থাকে। কিন্তু এবার করোনা আর লকডাউনের কারণে শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। কাজ নেই, জমানো অর্থও শেষ হয়ে যাচ্ছে ফলে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারছে না তারা। 

পাউবোর সুত্রে জানা যায়, ১৬টি নদ-নদীময় কুড়িগ্রাম জেলায় রয়েছে-৩১৬ কিলোমিটার নদী পথ। প্রতি বছর ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ী ঢলের কারণে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যায় প্রায় ৪২০ টি চরের ৪-৫ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে যায়। 

এছাড়াও রয়েছে আগ্রাসী নদী ভাঙন। ফলে নদ-নদী তীরবর্তী মানুষের দুর্দশা যেন সারা জীবনের। প্রতিবছর বন্যার পূর্বে লোকজন আগাম প্রস্ততি নেয়। ঘরবাড়ী মজবুত করে। আলগা চুলা, ঔষধপত্র, শুকনো খাবার ও জ্বালানী সংগ্রহ করে। পর্যাপ্ত চাল-ডাল ঘরে রাখে। 

কিন্তু এবার করোনা আর লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষকে ঘরে বন্দি থাকতে হচ্ছে। ফলে কাজ না থাকায় উপার্জনও কমে গেছে। এরফলে হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় আগাম প্রস্তুতির কাজে হাত দিতে পারছে না তারা। অপেক্ষা করছে বন্যা বুঝে ব্যবস্থা নিবে।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের শেখ পালানু গ্রামের আবুল হোসেন, আশরাফ আলী ও মমেনা বেগম বলেন,' লকডাউনের কারণে ঢাকায় কাজ করতে যেতে পারি নাই। যা টাকা নিয়ে আসা হয়েছে, তাই দিয়ে সংসার চলছে। ঘরবাড়ী মেরামত করাতে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে।'

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরফারাজী পাড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আশরাফুল, আবুল হোসেন, বক্কর ও মজিবর বলেন,'আমরা করোনা, নদী ভাঙন আর লকডাউনের কারণে খুব খারাপ অবস্থায় আছি। গত বন্যায় বাড়ীঘর দুর্বল হয়ে গেছে। বেড়াগুলা ঠিক করা দরকার কিন্তু টাকা খরচ করতে ভয় হচ্ছে। যদি লকডাউন শেষ না হয়, তাহলে আমাদেরকে ভীষণ বিপদের মধ্যে পড়তে হবে।'

এই ইউনিয়নের মেম্বার রিপন মিয়া বলেন,'এবার অনেকের ডিঙি নৌকা শুকনো জায়গায় পরে আছে। মেরামত করার অর্থ নেই। ফলে বন্যায় পারাপারে খুব সমস্যা হবে।'

সার্বিক বন্যার প্রস্তুতি নিয়ে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন,' করোনা ও লকডাউনের কারণে মানুষ আয় করতে না পেরে আগাম জিনিসপত্র কিনে রাখা, ঘরবাড়ী ঠিক করা, কিছু অর্থ সঞ্চয়ে রাখতে পারেনি। ফলে বন্যা মোকাবেলা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে উত্তরের এই জনপদে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিক নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয়া শুরু হয়েছে। '

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,"বন্যা মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা কবলিতদের জন্য পর্যাপ্ত চাল, নগদ অর্থ উপজেলা পর্যায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে এর প্রভাব তেমনটা পড়বে না।"