অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কোভিডের থাবা এবার পায়ের পাতায়?

হেল্থ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:০২ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২১ শুক্রবার  

বর্তমান সময়ে কোভিড নানাভাবে আমাদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলেছে। শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমস্ত অর্গানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এই করোনা। কোভিডের বিভিন্ন প্রভাবের মধ্যে এখন আবার শোনা যাচ্ছে ‘কোভিড টো’-এর কথা। এটি আর কিছুই নয়, পায়ের বুড়ো আঙুল এবং তার আশেপাশের আঙুলে আলসার বা নেক্রোসিস জাতীয় একটি রোগ। কিন্তু এখন এটিই চিকিৎসকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি বিবিসি স্কটল্যান্ডস্ ‘দ্য নাইন’ তাদের একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, স্কটল্যান্ডের এক কিশোরী এই অসুখের শিকার। বিগত নয় মাস ধরে তার পায়ের অবস্থা এমনই হয়ে রয়েছে যে সে জুতাই পরতে পারছে না। 

কিশোরী  জানিয়েছে,”আমার পা ফুলে গিয়ে তাতে ফোস্কা পড়েছে। পায়ের আঙুলের রঙ ক্রমশই গোলাপি থেকে বেগুনি হয়ে উঠছে।” এমনকি তিনি এও জানিয়েছেন যে, সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত আঙুলের তলায় মাংস পিন্ডের বৃদ্ধি হয়েছে। যার ফলে তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না।

নিউজ মেডিক্যাল.নেট-এর বক্তব্য অনুযায়ী, কোভিড-টো একইসঙ্গে পায়ের পাতায় ও আঙুলে হতে পারে। সাধারণত এটি পায়ের পাতা থেকেই শুরু হয়। পায়ের কোনও আঙুল বা পাতার কোনও অংশে এই ভাইরাস জন্ম নেয়। উজ্জ্বল লাল রঙ থেকে ধীরে ধীরে বেগুনি রঙের হয়ে গিয়ে তারপর আস্তে আস্তে পায়ের সব অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

উজালা সিগ্নাস গ্রুপ অফ হসপিটাল এর প্রতিষ্ঠাতা-ডিরেক্টর, ডাক্তার শুচীন বাজাজ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কে জানান,”কোভিডের সাম্প্রতিক লক্ষণ হিসেবে এই কোভিড-টো চিহ্নিত হয়েছে। এটি ১০ থেকে ১৪ দিন বা বেশ কিছু মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। এই রোগে পায়ের আঙুলের রঙ পরিবর্তন হয়ে গিয়ে চুলকানি হতে পারে তবে সাধারণত কোনও ব্যথার অনুভব থাকে না। তবে কখনও কখনও পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে আপনার পক্ষে জুতো পরাও সম্ভব হবে না।”

কোভিড টো-এর কারণ-

কোভিড টো-এর কারণ হিসেবে নির্দিষ্ট কোন তথ্য এখনও সামনে আসেনি। কী কারণে এই রোগ হচ্ছে এবং কাদের মধ্যে এর প্রভাব বেশী সেই কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। নিউজ-মেডিকেল.নেট-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, কোভিড টো-এ আক্রান্তদের বেশীরভাগের মধ্যে আর কোন লক্ষণ তেমন ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কমবয়সিদের ক্ষেত্রে হাল্কা জ্বর বা সর্দির কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

আবার কোলভিরাস এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে, কমবয়সিদের ক্ষেত্রে কোভিডের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক অনাক্রম্যতা(রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা)-র ফলে ছোট ছোট রক্তজালিকা অভিযোজিত হয়ে পায়ের পাতায় এরকম সংক্রমণ ঘটায়।

মেডিকেলনিউজটুডে.কম এর বক্তব্য অনুযায়ী, গবেষণার অন্য একটি ধারা বলছে আমাদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রা-ই এই রোগের কারণ, এরসঙ্গে কোভিডের কোন সম্পর্ক নেই। লকডাউনের কারণে মানুষ গৃহবন্দী। তার স্বাভাবিক কাজকর্ম সবই ব্যহত। একইভাবে বসে থাকা, কর্মহীনতা, খালি পায়ে হাটাচলা করা এই রোগের কারণ।

এই রোগের লক্ষণ

বেশীরভাগ লোকের ক্ষেত্রে কোভিড-টো এর কারণে কোনও ব্যথা না থাকলেও পা-এর আঙুলের রঙ পরিবর্তন সকলের ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। গুরগাঁও এর পারস হসপিটাল এর সিনিয়ার ডার্মাটোলজিস্ট ডাক্তার নন্দিনী বড়ুয়া বলছেন, অনেকের ক্ষেত্রেই এই রোগে পায়ে চুলকানি, ফোসকা ও ব্যথা লক্ষ করা যাচ্ছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে পায়ের তলায় পুঁজ তৈরি হচ্ছে। কাজেই এই সকল কিছুকেই আমাদের কোভিড টো-এর লক্ষণ বলে ধরে নিতে হবে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে প্রমাণিত কোন তথ্য নেই। এর লক্ষণ এবং কাদের মধ্যে এই রোগ হচ্ছে সেই বিষয়েও কোন তথ্য ডাক্তারদের কাছে নেই। এমতাবস্থায় ডাক্তার নন্দিনী বড়ুয়ার মতে,”এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। ব্যথা বা চুলকানি দূর করতে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে হাইড্রোকোটিসন ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তাতে কাজ না হলে বা সমস্যা বেড়ে গেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।”