ভার্জিনিয়ায় বাংলা সাহিত্য উৎসব ২০২৫, সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা আয়োজনে মজে থাকা একটি দিন
মাহমুদ মেনন, ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, ৩ জুলাই ২০২৫ বৃহস্পতিবার আপডেট: ০৮:৫০ পিএম, ৩ জুলাই ২০২৫ বৃহস্পতিবার

বলছিলাম, সাহিত্য আড্ডায় মজে থাকা একটি দিনের কথা। বস্তুত সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে নানা আয়োজনের একটি দিন। সেটি ছিলো বাংলা সাহিত্য উৎসব ২০২৫। গত ২৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ডিসি-মেরিল্যান্ড ভার্জিনিয়ার সাহিত্যপ্রেমি মানুষগুলোর দিনটি কেটেছে ভীষণ এক আবেশে মজে থেকে। সে আবেশ সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উপকরণ হিসেবে কাজ করেছে নানা সাহিত্যকর্ম। কার সাহিত্যকর্ম? কোন সাহিত্যকর্ম? এমন প্রশ্নের উত্তর এককথায় দেওয়া যাবে না। এখানে সব এসেছে। গল্প- কবিতা-উপন্যাস! যে যার যে বিভাগে আগ্রহ, দক্ষতা কিংবা ভালোবাসা সে তা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তবে তাদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি প্রায় সকল শাখায় এরই মধ্যে রেখেছেন তার নিপুণ পদচিহ্ন। তিনিই বলা চলে মধ্যমণি হয়ে থাকলেন গোটা দিন জুড়ে। তিনি সাদাত হোসাইন। তরুণ এক গুণি গল্পকার, উপন্যাসিক ও কবি। মূলতঃ তাকেই ফিচারাইজড করা হলো এবারের সাহিত্য উৎসবে। 'কবিতার সাথে' ছিলো যার মূল আয়োজক।
প্রশ্ন অনেকেই করবেন 'কবিতার সাথে' এটা কি সংগঠনের নাম। সে প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেয়া মুশকিল। কারণ যিনি 'কবিতা' তিনিই ছিলেন এই আয়োজনের হোতা(!)। কি? নেতিবাচক ঠেকছে শব্দটা। আসলে এই শব্দের যতগুলো ধণাত্মক ব্যবহার আছে তার কোনোটা দিয়ে বোধ হয় প্রকাশ করা যাবে না... কবিতা দিলাওয়ার এই আয়োজনের কে ছিলেন! একমাত্র যারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তারা দেখেছেন লাবন্যমাখা মুখে সদা হাসি ছড়িয়ে কি দৃঢ়তায় অথচ কোমল পরশে পরশে তিনি বিনিসূতায় গেঁথেছেন একটি দিনকে স্রেফ সাহিত্য-কলা-কৃষ্টির অনুপম সব সৃষ্টির ধারাবাহিক পরিবেশনায়। যারা ছিলেন সেই সব পরিবেশনার শিল্পী-কলা-কুশলি তাদের সকলকেই দেখলাম মুগ্ধ অনুসারি হয়ে কবিতা দিলাওয়ারের নির্দেশনামতো যে যার পরিবেশনা দিয়েই গোটা দিনকে করে তুললেন উপভোগ্য।
কি ছিলো সেসব পরিবেশনায়? ছিলো সাহিত্যালোচনা, কথামালা, পাঠ, কাব্য, নৃত্য, গীতি আরও কত কি! সাহিত্যময় এই দিনটি শুরু হয় দুপুর নাগাদ। রৌদ্র করোজ্জ্বল দুপুরে জাতীয় সঙ্গীতের সুরের সাথে যেনো ঠিক মানিয়ে যায় সেই শুরুটা। দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় প্রজন্মের শিশুরা যারা ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাভাষার চর্যা করছে মনের গভীর থেকে বাংলাকে ভালোবেসে তারাই গায় জাতীয় সঙ্গীত। বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থী এরা সকলে।
এরপর অনাড়ম্বর উদ্বোধনী। কবি ঔপনাস্যিক সাদাত হোসাইনের সঙ্গে এসময় মঞ্চে ছিলেন স্থপতি আনোয়ার ইকবাল, শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন নীতি পরিকল্পক ড. আবদুন নুর, সাংবাদিকতার দুই দিকপাল ইকবাল বাহার চৌধুরী ও সরকার কবিরুদ্দিন, শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক তথা ব্যবসায়ী আনিস খান। সঙ্গে অনুষ্ঠানের আয়োজক কবিতা দিলাওয়ার।
উদ্বোধনের পর মঞ্চে পাতা হলো চেয়ার- পেছনে ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে উঠলো আয়োজনের শিরোনাম- স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা। পর্বের সঞ্চালক ড. মোহাম্মদ নাকিবউদ্দীন মঞ্চে ডেকে নিলেন সরকার কবিরুদ্দিন, ড. আবদুন নুর, ইকবাল বাহার চৌধুরী আর রোকেয়া হায়দারকে। প্রত্যেকেই তাদের জীবনের গল্প শোনালেন, লেখক সত্ত্বার গল্প শোনালেন আর শোনালেন তাদের অর্জনের অনুপ্রেরণার কথা।
সঞ্চালনায় ড. নাকিবউদ্দিনের খ্যাতি সেই নব্বই দশকের বিটিভি যুগ থেকেই। নিজের নামের প্রতি সকল সম্মানই দেখালেন বর্তমানে জনহপকিনসের এই চিকিৎসা গবেষক। আর আলোচকরা একেকজন যে এখানকার কমিউনিটি তথা গোটা বাঙালি জাতির কাছেই উজ্জ্বল নক্ষ্যত্র সে কথা বলাই বাহুল্য। ইকবাল বাহার চৌধুরী তার চিরাচরিত ভারিক্কি কণ্ঠে শোনালেন সাংবাদিকতার বাইরেও তার নাট্য অভিনয়ের কথা। সরকার কবিরউদ্দিন সুচন্দা, কবরী, সুজাতার নায়ক ছিলেন সে কথা বোধহয় অনেক দর্শকই এই প্রথম জানলো। আর ড. নুর গল্প লেখার উপকরণ কিভাবে মেলে তার রহস্য উন্মোচন করলেন। বিশ্বের দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগটাই সেক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। রোকেয়া হায়দার জানালেন তার সত্তোরর্ধ বয়সে সেই তন্বি-তরুণীটিই রয়ে গেছেন মনে ও প্রাণে। শোনালেন খবর পড়ার সেই চিরায়ত সিগনেচার টোন- ভয়েস অব আমেরিকা থেকে খবর পড়ছি রোকেয়া হায়দার। সঞ্চালকের মুন্সিয়ানায় গল্পগুলো অনুরণিত হতে থাকলো হল জুড়ে। আর কথায় কথায় সময় পেরিয়ে গেলো।
এরপর নাচ হলো। বিষয়বৈচিত্র্যে ভরা আয়োজনে এতো স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা মারিয়া ইসলাম জাহিন তার আনন্দলোকে শিরোনামের নৃত্য পরিববেশনার মধ্য দিয়ে দর্শককে স্রেফ আন্দন্দেই ভাসালো না, মুগ্ধতায়ও ভরিয়ে দিলো। আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে- বিরাজো, সত্য সুন্দরও। সৃষ্টি নৃত্যাঙ্গনের দুই শিল্পী খ্রিস্টিন ও সুকন্যা হাতে ডালি সাজিয়ে মঞ্চের দুই ধারে দাঁড়িয়ে ছিলো আগে থেকেই। একটু পরে তারাও নাচলো রোজমেরি মিতু রিবেরোর কোরিওগ্রাফিতে। দর্শক সারিতে শুনলাম একজনের ফিসফিস- 'এই বাচ্চাগুলোর এদেশে জন্ম। এদেশেই বড় হয়েছে। অথচ নিজ দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিটা কী দারুণ রপ্ত করেছে তাই-না।'
সত্যিই তাই। এভাবেই আলোচনার রেশ কাটিয়ে নাচের নুপূরের নিক্কন যখন দর্শকের কানে তখন ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে উঠলো পরের আয়োজনের ঘোষণা। জানা গেলো এখনই মঞ্চে আসবেন ড. আমীনুর রহমান। আলোচনার বিষয় 'চরিত্রবান সাহিত্য ও সাহিত্যের চরিত্ররা'। বাংলাসাহিত্যেই যার পিএইচডি, তাকে তো সাহিত্যের পণ্ডিত বলাই চলে। কিন্তু ড. আমিনুর সে পাণ্ডিত্যের রীতিমতো একটা প্রদর্শণী করে ফেললেন স্রেফ কথা মালায়। আধাঘণ্টা খানেক তার মুখের বুলিতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো রবীঠাকুরের লাবণ্য, মানিক বন্দোপাধ্যয়ের কপিলা, শরৎচন্দ্রের পার্বতী, চন্দ্রমুখীরা। পাশে অমিত রায়, কুবেররা তো ছিলেনই। আর তার সাথে সাথে চরিত্রের একটা রীতিমতো ধোলাই করে ছাড়লেন এইসব চরিত্র স্রষ্টাদের তথা তাদের সাহিত্যকর্মের। সে সব অপবাদ কে কিভাবে নিলেন তা জানা গেলো না, তবে ড. আমীনুর রহমানের রসালো আলোচনা তথা আলোচনা থেকে ঝরে পড়া রসের আস্বাদন করতেই বুঝি দেখা গেলো সবাইকে।
এরপর গান। ও আমার দেশের মাটি শিরোনামে ড. ফয়সল কাদের আর লাবনী কাদের জুটি তিনটি গানে দর্শক-শ্রোতার মন কেড়ে নিলেন। রবি ঠাকুর, ডিএল রায়ের গান কার না শুনতে ভালো লাগে।
খটমটো আলোচনাও কিন্তু হয়ে গেলো একফাঁকে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাহিত্য' এই শিরোনামে। অভিক সারোয়ার রহমান দীর্ঘ সাংবাদিকতা চর্চা থেকে খানিকটা সরে এখন আইটি নিয়ে পড়ে একটু আধটু ঘাঁটাঘাটিও করছেন। তারই উপস্থাপনায় জ্ঞানগর্ভ কিছু আলোচনা ভালোই মন দিয়ে শুনলেন দর্শক।
কিন্তু অনুষ্ঠান আবার জমে উঠলো 'কলমের আড়ালে মানুষ' শিরোনামে জনা কয়েক কবি-লেখককে নিয়ে যখন বসলেন আয়োজনের মধ্যমণি সাদাত হোসাইন নিজেই তখন তিনিও তার উপস্থাপনার মুন্সিয়ানা দেখালেন। শুরুতে অবশ্য বলেছিলেন, তিনি কথা বলতে পছন্দ করেন, কথা বলাতে ততটা পারদর্শী নন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা দেখা গেলো কবি-সাহিত্যিকরা তাদের গল্পের ঝুলি ঠিকই খুললেন এই আয়োজনে। দর্শক জানলেন তাদের লেখক সত্ত্বা অনুপ্রেরণা কথা তথা তাদের লেখালেখির নানা গল্প। অবশ্য সাদাত হোসাইনের সঙ্গে সঞ্চালনায় আরও ছিলেন লেখক ফরহাদ হোসেন। অংশ নিলেন আহসাদ জামান, ড. হাসান মাশরিকী, তাহমিনা কবির, হুমায়ুন কবির ঢালী, সৈয়দ হাই, শামসুদ্দিন মাহমুদ ও শেগুফতা শারমিন।
সাহিত্য উৎসব হবে- তাতে আবৃত্তি থাকবে না, তা হয় না। বেশ কয়েকটি আবৃত্তি আয়োজন অনুষ্ঠানসূচিতে আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিলো। অনুষ্ঠানমালার মাঝে মাঝেই দেখা গেলো আবৃত্তি শিল্পীদের পরিবেশনা। 'আমি সেই মেয়ে' শিরোনামে অদিতি সামিয়া রহমান যখন নামকরণ স্বার্থক করে শুভ দাশগুপ্তকে পড়েও আরও দুটি জীবন ধর্মী কবিতা শোনালেন। এবং কেড়ে নিলেন দর্শকমুগ্ধতা।
কিন্তু বলা চলে গোটা শোটাই চুরি করে নিলো ছোট্ট একটি মেয়ে। নাম অপ্সরা বনিক। মা সম্পা বনিকের সাথে 'কণ্ঠ ও কাব্যের বৈঠক'এ অপ্সরা গাইলো। আর তার গানের গল্প শোনালো মা। পরপর তিনটি গানের পরিবেশনা। তার মধ্যে দুটোই রাগপ্রধান। তাতে দর্শক সারিতে ফিসফিস- এ মেয়ের কণ্ঠে যাদু আছে। এই মেয়ে যাবে বহুদুর।
এরপর হয়ে গেলো একটি ভিন্নরকম আয়োজন। তার শিরোনাম 'শব্দেরা যেখানে গল্প'। এই আয়োজনে মঞ্চে এলেন উত্তর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত প্রথম আলো পরিবারের একটি দল। নেতৃত্বে সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন। স্থপতি লেখক আনোয়ার ইকবালের সঞ্চালনায় সে আয়োজনটিও প্রাণবন্ত ছিলো কারণ অংশগ্রহণকারী প্রথমআলোর সংবাদকর্মী এইচবি রিটা, শেলী জামান খান, রোকেয়া দিপা, কুলসুম আক্তার সুমি, সুবির কাশ্মীর পেরেরা, হেলাল উদ্দিন রানা ও দীনা ফেরদৌসদের প্রত্যেকেরই একটি বলার মতো গল্প ছিলো।
দর্শক সে গল্প শুনে কবির কবিতা থেকে পাঠ শোনার অপেক্ষায়। তখন মঞ্চে তানিয়া তোফা। তিনি পড়ে শোনালেন লেখক সাদাত হোসাইনের একটি উপন্যাসের একাংশ। যেটি মূলতঃ একটি চিঠি। বিরহী প্রেমিকার সেই চিঠিতে লেখকের হাতের যাদুর সাথে পাঠকের কণ্ঠের যাদু বেশ খাপ খাইয়ে গেছে, তা শ্রোতামাত্র স্বীকার করবে। এরপর কবি সাদাত হোসাইনের কবিতা 'একটি দুঃসংবাদ আছে' পড়ে শোনালেন শিক্ষক সাংবাদিক মাহমুদ মেনন খান।
এরও আগে অনুষ্ঠিত হলো 'প্রকাশনা শিল্পের এপীঠ ওপীঠ। স্বদেশ শৈলীর অ্যান্থনী পিউস গোমেসের সঞ্চালনায় এই আলোচনায় অংশ নিলেন মুক্তধারা'র বিশ্বজিত সাহা, নালন্দার রেদওয়ানুর রহমান, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের শামারুখ মহিউদ্দিন আর অন্বয়'র হুমায়ুন কবির ঢালী। তাদের বক্তব্যের প্রকাশকদের সুখ-দুখের কিছু বিষয় উন্মোচিত হলো দর্শক শ্রোতার সামনে।
শুধুই কি মঞ্চ, হলিডে এক্সপ্রেস ইন এর গোটা লবি জুড়ে বসেছিলো বইমেলা। শাড়ি-কাপড় আর খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন কেউ কেউ। সেসবেও ভিরভাট্টা, বিকিকিনি লেগেই ছিলো সারাক্ষণ।
দিনভর আয়োজনের এখানে ওখানে ক্যামেরা হাতে সবার ছবি তুলে বেড়াচ্ছিলেন অ্যান্ড্রু বিরাজ। আশা করি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না এক সময়ের রয়টার্সের এই অ্যাওয়ার্ড উইনিং ফটো সাংবাদিককে। সন্ধ্যায় তাকে দেখা গেলো মঞ্চে। কথা বলছেন ‘ফটোগ্রাফি, দ্য আর্ট অব স্টোরি টেলিং’ শিরোনামে । একটি ছবি হাজার শব্দের কথা বলে। প্রতিটি ছবিই একটি গল্প আবার প্রতিটি ছবি তোলারও একটি গল্প থাকে। ছবিতে ছবিতেও গল্প বলা যায়। তারই কলা-কৌশলের কথা দর্শক মুগ্ধ হয়ে শুনলেন ।
ততক্ষণে সাহিত্য উৎসবের দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়িয়েছে। মঞ্চে তখনও অনেক চমক বাকি। কবিতা নিয়ে এলেন সিলিকা কণা ও রেজা অনিরুদ্ধ । অনবদ্য আবৃত্তিতে তারা দর্শককে যখন মুগ্ধ করে মঞ্চ ছাড়লেন তারপর সুরের লহরী তুলে অনিন্দ্য এক পরিবেশনায় উপহার দিলেন ডরোথী বোস ‘এসো শ্যামলও, সুন্দরও’।
কিন্তু কিছু কিছু পরিবেশনা থাকে যা মাটি ও মানুষের । এবং যার রেশ কেবল অনুষ্ঠানস্থল তথা আয়োজনের দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। স্থান ও সময়কে ছাপিয়ে যার রেশ থেকে যায় অতিক্রান্ত কালেও। শেখ মাওলা মিলন ও আনিকা মেধার ‘প্রাণের টানে, মাটির গানে’ শিরোনামের পরিবেশনা নিয়ে এমন মন্তব্যে আশা করি কারো দ্বিমত থাকবে না।
কবিতা দিলাওয়ারকে সেই যে দুপুরে মঞ্চে দেখা গেলো তারপর এখন তখন মঞ্চে এলেন বটে, তবে তা এইসব পরিবেশনার স্বীকৃতি জানাতে। কারো হাতে তুলে দিচ্ছিলেন ক্রেস্ট, কারো হাতে বই। আর দফায় দফায় ধন্যবাদ জ্ঞাপনতো ছিলোই।
একদফা আনুষ্ঠানিক ভাবে ধন্যবাদ জানালেন স্পন্সর ও সহযোগীদের । বিশেষ করে যেসব নাম না বললেই নয় তার মধ্যে অন্যতম দিলাওয়ার হোসেন, যার সম্পর্কে কবিতা বললেন, যাকে ছাড়া আমার নামটাই পরিপূর্ণ নয়। সারাক্ষণ অদূরে দাঁড়িয়ে তদারকি করে গেছেন দিলাওয়ার । কিন্ত আরেকজন ছিলেন ছায়ার মতো লেগে। তিনি ড. তারেক মেহেদী । কবিতা দিলাওয়ার জানালেন, দিলাওয়ার হোসেন ছিলেন তার মনোবল আর তারেক মেহেদী এই আয়োজনের প্রাণশক্তি হয়ে কাজ করেছেন।
আয়োজক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের পাশাপাশি এই সাহিত্য উৎসবের দর্শকসারিতে বসে থাকা মানুষগুলো ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ। হলিডে ইন এক্সপ্রেসের সত্ত্বাধিকারী আনিস খান ছিলেন গোটা সময়টা জুড়েই। এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রসরমান বাংলাদেশি আমেরিকানের আরেকজন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপসহ আরও অনেকেই। এরা এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক।
রাত নামতে কবিতা মঞ্চে উঠলেন কবি-লেখক সাদাত হোসাইনকে নিয়ে। লেখকের গুণমুগ্ধ তিনি তাতে সন্দেহমাত্র নেই, কিন্তু তা বলে এক সময়ের সাংবাদিক কবিতা দিলাওয়ার কঠিন প্রশ্ন ছুড়তে ছাড়লেন না। লেখক অবশ্য জানিয়ে দিলেন, মানুষ তার বই পড়বে, তার বিনিময়ে নোবেলের মতো বড় পুরস্কারও তিনি ছাড়তে রাজি ।
এরপর শুধুই গান আর গান। ‘পরাণ ভরিয়া শুনিতেছি গান’ শিরোনামের স্বার্থকতা রেখে আনিলা নাজ চৌধুরি এবং আবহমান বাংলার গান গেয়ে স্বপ্নিল সজীব দর্শককে মুগ্ধ করবেন একথা নতুন করে লেখার প্রয়োজন নেই। তবে যা বলা প্রয়োজন তা হচ্ছে তাদের গানের অনুরণন। যা হয়তো দর্শক শ্রোতার মনে ধরে থাকবে অনেক দিন। তারা আবারও চাইবেন তাদের শুনতে এমনই কোনো আয়োজনে।
ধন্যবাদ জ্ঞাপনে সে প্রতিশ্রুতি দিলেনও কবিতা দিলাওয়ার । কিন্তু তিনি কেনো, কবিতা উৎসবের এই আয়োজন যে হরবছর হতেই হবে তা নিশ্চিত করেছে এবারের দর্শক শ্রোতা। তারা সারাটা দিন কাটিয়েছে এক অনাবিল আবেশে দারুণ মুগ্ধতায় । একটি আয়োজনের জন্য এর চেয়ে আর কী-ই চাওয়ার আছে।
তাহলে আর কি! কবিতার সাথে’র জন্য ২০২৬ এর সাহিত্য উৎসবের আগাম শুভকামনা রইলো।