অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

এই প্রজন্ম সিআরবিতে হাসপাতাল করতে দেবে না: ড. অনুপম সেন

রাজিব শর্মা, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ২০ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৯:২৭ এএম, ২০ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার

সিআরবিতে কোনোভাবেই হাসপাতাল হতে দেয়া হবে না। সিআরবিতে হাসপাতাল না করার দাবিটি পুরো চট্টগ্রামে। সঠিক বার্তাটি প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছানো গেলে তিনি আমাদের কথা শুনবেন।

সোমবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামে উদ্যোগে সেখানে একটি আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল না করার দাবিটি পুরো চট্টগ্রামের। এই শহরের এক সময়ের যে প্রাকৃতিক দৃষ্টিনন্দন ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গা ছিল কোনোটিই এখন আর নেই। এমনকি চট্টগ্রামের যে পরীর পাহাড় বা ফেয়ারি হিল বা কোর্ট বিল্ডিং, এক সময় সেখানে উঠলে কর্ণফুলী নদী যে চট্টগ্রাম শহরকে বেষ্টন করে রয়েছে তা দেখা যেত। আজকে কিছুই দেখা যায় না।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন আরও বলেন,  চট্টগ্রাম গাছ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গলকে রক্ষায় বিশ্বেও অনেক দেশ অর্থ দিয়ে যাচ্ছে কারণ বিশ্বের অক্সিজেনের চাহিদা মেটায় আমাজন। ঠিক সেরকম এই সিআরবিতে অসংখ্য শতবর্ষী গাছ রয়েছে কত চমৎকার। এই পুরো অঞ্চলটাই মহানগরীর শ্বাস কেন্দ্র। এখানে রয়েছে শহীদ আবদুর রবের বাসা। এই শহীদ আবদুর রবের সাথে ১৯৭১ সালের এপ্রিলে কানুনগোড়ায় দেখা হয়েছিল। তখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের জিএস। আমি বলেছিলাম রব তুমি সাবধানে চলাফেরা করো। শহরে যাচ্ছ বলছো, সাবধানে যেও। সে আমাকে বলেছিল, স্যার আপনি সাবধানে থাকবেন। দু:খের বিষয় সেই রব শহীদ হয়েছিল। সেই শহীদেও জায়গা এই সিআরবি। এইখানে কখনোই প্রফিটের জন্য একটা হাসপাতাল আমরা করতে দিতে পারি না। 


এই চমৎকার জায়গায় মহানগরীর প্রকৃতির সবচেয়ে মনোরম কেন্দ্রে অর্থগৃধ হাসপাতাল করতে আমরা কখনোই দেব না। এটিকে ধ্বংস করতে দেব না। তরুণ প্রজন্ম দেবে না। আমরা যদিও বৃদ্ধ হয়েছি, আমরাও দেব না। আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করব। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতি সচেতন এবং তিনি মানুষের কথা সবসময় ভাবেন। তাকে ভুল বুঝানো হয়েছে। তাকে যথাযথ বার্তাটি দিতে পারলে তিনি নিশ্চয় আমাদের কথা শুনবেন। এই আমলা বা রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী যারা তাকে ভুল বুঝিয়েছেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হব। আমরা প্রতিজ্ঞা করছি এখানে এই হাসপাতাল হতে দেব না। প্রয়োজনে অনশন থেকে শুরু করে যা কিছু করার সবকিছু আমরা করব।

এ কর্মসূচিতে অংশ নেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাস আমিন, ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়নজি, পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিস আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, পিপলস ভয়েস সভাপতি শরীফ চৌহান, ন্যাপ নেতা মিঠুল দাশগুপ্ত, আবৃত্তি শিল্পী অঞ্চল চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসান আকবর, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু, শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের, আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর, যুব নেতা নূরুল আজিম রনি। 

সন্ধ্যায় আলোক প্রজ্জ্বলনের সময় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী চট্টগ্রামের শিল্পীরা। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শেষে প্রতিবাদী সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান হয় চট্টগ্রাম যন্ত্র শিল্পী সংস্থার আয়োজনে।

নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শুকলাল দাশ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ঋত্তিক নয়ন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রমেন দাশগুপ্ত, মহররম হোসেন, আমিনুল ইসলাম মুন্না, পার্থ প্রতিম বিশ্বাস, রাহুল দত্ত, মিনহাজুল ইসলাম, সব্যসাচী টিটু, রাজিব শর্মা, বিনয় ভৌমিক, সৌরভ দাশ।