অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

এভিয়েশনকে বাঁচিয়ে রাখুন! অনেক স্বপ্ন বেঁচে যাবে

মো. কামরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ১১ জুলাই ২০২১ রোববার  

প্লেন আকাশে না উড়লে আয়ের কি কোনো সুযোগ আছে? একটু জানাবেন? আয় না থাকলে একটি এয়ারলাইন কোম্পানী কিভাবে টিকে থাকবে সেটাও একটু জানাবেন? একটি এয়ারলাইন কোম্পানীকে ব্যবসা করার সুযোগ দিলেন, এয়ারক্রাফট সংগ্রহের সুযোগ দিলেন? কিন্তু আকাশে উড়ার অনুমতি দিচ্ছেন না। তাহলে কি করে এয়ারলাইন কোম্পানীটি টিকে থাকবে? এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টির কি হবে? এয়ারলাইন কোম্পানীগুলোতে যেসকল কর্মজীবী মানুষ রয়েছে তাদের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা কে দিবে?

প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগে একজন বৈমানিক তৈরী হয়। একটি পরিবার স্বপ্ন লালনের ফসল হয়ে উঠে একজন কমার্শিয়াল পাইলট। প্লেন যদি আকাশেই না উঠে তাহলে সেই পাইলটের কথা একবার ভাবুন তো? নতুন করে কি আর কিছুর স্বপ্ন দেখার সুযোগ আছে?

যারা এভিয়েশনকে নিয়ে চিন্তা করেন? চিন্তাগুলোকে একটু বাস্তবধর্মী করুন না হলে পাইলট হওয়ার স্বপ্নগুলো ছিপিযুক্ত বোতলবন্ধী হয়ে যাবে। স্বপ্নগুলোও আর উড়ে বেড়াবে না। স্বপ্ন দেখতেও সাহস প্রয়োজন। সেই সাহসগুলোকে সমূলে ধ্বংস না করে সাহস দেখার পরিবেশ তৈরী করুন।

করোনার কাছে আমরা পরযদুস্ত। সব কিছু বন্ধ করে, স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে, করোনা ভাইরাস রোধ করা যাবে না। স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি করুন। জীবন ও জীবিকা একসংগে চলার ব্যবস্থা করুন। এভিয়েশন খাতের এই শূন্যতা দীর্ঘমেয়াদে ফল ভোগ করতে হতে পারে। একটি ইন্ডাস্ট্রি আজ ধ্বংসের কিনারায়। ধ্বংসের হাত থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

আজ বেসরকারী দু’টো এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার টিকে আছে। আসলেই কি ব্যবসায় টিকে আছে? নাকি আকাশপথ বন্ধ দেখেই কাগজে কলমে টিকে আছে। আরেকটি এয়ারলাইন রিজেন্ট এয়ার সেই করোনার শুরুতে সাময়িক বন্ধ থাকার ঘোষণার পর আবার শুরু করার ঘোষণা দিতে পারেনি। উদাহরনের জন্য বিশ্ব ভ্রমণ করার প্রয়োজন নেই, নিজ দেশের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। সেই এয়ারলাইনের  পাইলটসহ অন্য এমপ্লয়িদের কথা একবার ভাবুনতো। 

মহামারি করোনার কারনে বন্ধ হওয়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সহস্রাধিক এমপ্লয়ি কি অবস্থায় আছে? লকডাউন, শাটডাউন কিংবা সাধারণ ছুটির সাথেও কি তাদের সকল নিত্যদিনের চাহিদাও ছুটি নিয়েছে? নাকি তাদেরও জীবিকা নির্বাহের জন্য রুটি রুজির প্রয়োজন আছে? সকল আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে আছে। বেঁচে থাকবার জন্য কোন পথটি খোলা আছে একটু বলবেন কি? এখানে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ এর এমপ্লয়িদের কথা উল্লেখ করা হলো। আর চলমান দু’টো এয়ারলাইন্স? আকাশপথের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকিয়ে আছে। ছোট হয়ে আছে আন্তর্জাতিক রুট। মাস কে মাস, আবার কোনো রুটে বছর পার হয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ রুটের নিষেধাজ্ঞায় আছে নানা রকমের অনিশ্চিয়তা। 

কত পরিকল্পনা, কত বিনিয়োগ রয়েছে আকাশপথকে শক্তিশালী করার জন্য কিন্তু এসকল পরিকল্পনা আর বিনিয়োগের কি হবে? স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত তেমন একটা এগিয়ে যেতে পারেনি। বর্তমান অবস্থায় সামনে যাওয়ার কি কোনো সুযোগ আছে? এয়ারলাইন কোম্পানীগুলোর পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে সরকারের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। না হলে এ খাত আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। যেখান থেকে কোনোভাবেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যারা এভিয়েশনে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখতো তারা আর এভিয়েশনমুখী হওয়ার স্বপ্নও দেখবে না। নিজেকে খুঁজে নিবে অন্য কোথাও, অন্য কোনো ক্যারিয়ারে।

আকাশপথের উন্নয়নের উপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল আজ গড়ে উঠছে নানাবিধ শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ অবকাঠামোও বিপরযস্ত হবে। শুধু এভিয়েশনের প্রয়োজনে নয়, অন্য অন্যখাতকে টিকিয়ে রাখতেও এভিয়েশনকে বাঁচিয়ে রাখা সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে।   

এয়ারলাইন ইন্ডাস্ট্রির উপর নির্ভর করছে শতশত ট্রাভেল এজেন্সী, ট্যূর অপারেটর। লক্ষ লক্ষ এমপ্লয়ি, হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। কি হবে তাদের, কে দেখাবে তাদের বেচে থাকবার স্বপ্ন? অনিশ্চিয়তা যে তাদেরকে আকড়ে ধরেছে। কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সব স্বপ্নগুলোকে।

হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত শত শত হোটেল, রেস্টুরেন্ট। অনিশ্চয়তার দোলাচলে পুজি হারানোর ভয়ে দিনানিপাত করছে এখাতের বিনিয়োগকারীরা। সাথে হাজার হাজার কর্মচারীদের ভাঙ্গা হৃদয়ে বেজে উঠেছে মর্মস্পর্শী করুন সুর। যার শুরু আছে শেষ নেই।

এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখুন। অনেক স্বপ্ন বেঁচে যাবে। স্বপ্নই যদি মরে যায়। হাজারো পরিকল্পনা করে কোনো লাভ নেই। স্বপ্ন মরে যাবার আগেই তাকে বাচিয়ে রাখুন। নতুবা সব পরিকল্পনা তখন ভেস্তে যাবে। এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি তখন অনিশ্চয়তাকে আলিঙ্গন করবে।

লেখক: মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স