অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

সিংকহোল বা দানবাকৃতির গর্ত: প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি নতুন অধ্যায়

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, ২১ জুন ২০২১ সোমবার   আপডেট: ০২:৫৯ পিএম, ২১ জুন ২০২১ সোমবার

বিশ্বজুড়ে নতুন আতঙ্কের নাম ‘সিংকহোল’। গত এক মাসে ৫ দেশে এই দানবাকৃতির গর্ত তৈরির পর আলোচনায় এসেছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের উৎপত্তি ও কারণ। সম্প্রতি ঝড়-বৃষ্টি, ভূমিধ্বসের মতোই বাড়ছে সিংকহোল। তবে সম্প্রতি সিংকহোল বা দানবীয় গর্তের কারনে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে তুরস্কে। এক বছরের ব্যবধানে এ দেশে সিংকহোলের সংখ্যা ৩৬০ থেকে ৬০০ টিতে দাঁড়িয়েছে।

সিংকহোল হচ্ছে কোন একটি স্থানের ভূমি হঠাৎ অথবা ধাপে ধাপে ধসে যাওয়া। সিংকহোলগুলোর ব্যাস ও গভীরতা (ক্ষেত্রবিশেষে) ১ - ৬০০ মিটার অর্থাৎ ৩.৩ - ২০০০ ফুটের কাছাকাছি পর্যন্ত হতে পারে।

২০১০ সালে গুয়াতেমালা সিটিতে এটি দেখা যাওয়ার পর আলোচনায় আসে সিংকহোল। এর গভীরতা ছিল ১০০ ফুট এবং প্রশস্থতা ছিল ৬৫ ফুট। তখন এই সিংকহোলের কারনে ১৫ জন নিহত হয়।

সিংকহোল সাধারণত দুটি প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। যথাঃ কার্স্ট প্রসেস (বিভিন্ন আকরিক শিলার রাসায়নিক ভাঙ্গন) ও সাফোসন প্রসেস (একটি ভৌগলিক প্রক্রিয়া যেখানে পানি কিংবা অন্যকোন তরল পদার্থের কারনে ভূগর্ভস্থ মাটি বা শিলা ক্ষয় হয়ে সরে যায়)।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সিংকহোলটি ভাস্ট কাটারা ডিপ্রেসন (Vast Qattara Depression), যেটি মিশরের কায়রোতে অবস্থিত। এটি ১৩৩ মিটার গভীর, ৮০ কিমি লম্বা এবং ১২০ কিমি প্রশস্ত।

সাইবেরিয়াতেও রয়েছে ১ কিমি জুড়ে অবস্থান নেওয়া সিংকহোল।

চীনের জিয়াঝাই তিয়ানকেং (Xiaozhai tiankeng) হচ্ছে সবচেয়ে গভীরতম সিংকহোল, যার গভীরতা ৬৬২ মিটার এবং প্রশস্থতা ৬২৬ মিটার। 

বাহামাসের লং আইল্যান্ডে ডিনস ব্লু হোল অন্যতম বড় একটি সিংকহোল। এর গভীরতা ৬৫০ ফুট।

চুকুইচামাতা সিংকহোলটি চিলিতে অবস্থিত। এটি এখন কপার খনি হিসেবে ব্যবহার হয়। ২৭৯০ ফুট গভীর সিংকহোলটি সৃষ্টি হয়েছে ১৯১০ সালে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু সংকটের সরাসরি প্রভাব পড়ছে দানবীয় গর্ত তৈরিতে। তবে প্রকৃতিতে এমন দানবীয় গর্ত তৈরির ঘটনা নতুন নয়। যুগে যুগে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা গেছে বিভিন্ন দেশে। তবে সম্প্রতি অনেকটা বেড়েছে এর হার। 

গেল বছর ডিসেম্বরে এক ভূমিকম্পের পর একশ’র বেশি সিংকহোল তৈরি হয় ক্রোয়েশিয়ায়। গত এক মাসে তুরস্ক, ইতালি, মেক্সিকো, ইসরায়েলের পর এবার ভারতেও তৈরি হয়েছে সিংকহোল। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়েক দশক এমনকি শতাব্দী লাগে একটি সিংকহোল তৈরি হতে। ইউএসজিএস বলছে, ভূগর্ভস্থ পানি অথবা খনিজ উত্তোলন করা হলে মাটির অভ্যন্তরে ফাঁপা জায়গা তৈরি হয়। নিচের স্তরের মাটি যখন ভূমির উপরের চাপ নিতে পারে না তখনই ধসে পড়ে আর তৈরি হয় বিশালাকার গর্ত।

সিংকহোল সৃষ্টির দায়ী কারনগুলোর মাঝে রয়েছেঃ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, তীব্র ক্ষরা, মাটি ক্ষয়, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, মিথেন গ্যাসের প্রভাবসহ আরো অনেক মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারন।