অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরা নজরদারিতে পাবনার গ্রামীণ হাটবাজার

রিজভী জয়, পাবনা

প্রকাশিত: ১২:৪৪ পিএম, ৬ জুন ২০২১ রোববার   আপডেট: ১২:৪৭ পিএম, ৬ জুন ২০২১ রোববার

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর গুজব ছড়িয়ে পাবনার বনগ্রাম বাজারে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে চিহ্নিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, চাঁদা না দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে প্রকাশ্যে মন্দির ভাঙচুর ও প্রায় ২০ টি দোকান লুট করা হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিচারের আশ্বাস দিলেও যথাযথ সাক্ষীদের হাজির না হওয়া এবং প্রমাণের অভাবে ঘটনার ৮ বছরেও দোষীদের বিচার হয়নি। কেবল আলোচিত এ ঘটনাটিই নয় জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম হাটে মাঝে মধ্যেই ডাকাতি, চুরি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে।

কেবল বনগ্রাম হাটই নয়, একই চিত্র জেলার সকল বড় হাটগুলোতেই। হাটের দিনগুলোতে এসব এলাকায় বিপুল অংকের অর্থ লেনদেনকে টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে ওঠে অপরাধীরা। তৎপর হয় মাদক ব্যবসায়ী চক্রও।

পুলিশ জানায়, বিপুল জনসমাগমের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রমাণের অভাবে অনেক সময়ই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, অনেক চেষ্টার পড়েও।  তাদের চিহ্নিত করা ও নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলার সকল হাট-বাজারকে সিসিটিভ ক্যামেরার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। আতাইকুলা থানার বনগ্রাম ও দুবলিয়া হাটে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম।

আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বনগ্রাম ও আতাইকুলায় সিসি ক্যামেরার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুবলিয়া হাটে ১৬ টি এবং বনগ্রামে ২৪ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। হাটের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় হাটের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সিসি ক্যামেরার আওতায়। আর ক্যামেরার কন্ট্রোলরুম করা হয়েছে, হাট সংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়িতে, যেখান থেকে সরাসরি বিশাল এ হাটের পুরো এলাকা মনিটর করছেন পুলিশ সদস্যরা। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে বিশাল এ হাটের পুরোটাই থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ফলে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে পৌছাতে পারবে ।

সরেজমিনে বনগ্রাম হাট ঘুরে দেখা গেছে, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে বিশাল এ হাটের কার্যক্রম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকায় বাজারের ব্যবসায়ীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করছেন। বনগ্রাম হাটের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, প্রতি হাটবারে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ, পাটসহ নানা কৃষি পণ্য নিয়ে আসে। তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা লুঙ্গি, শাড়ী কিনতে আসেন। প্রতি সপ্তাহে হাটে প্রায় একশ কোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে ব্যবসায়ীরা প্রায়ই চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডের শিকার হয়। জনবহুল এ হাটে অপরাধীদের সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। তবে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় ব্যবসায়ীরা এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। এখন কোনো অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত হলেও সিসি ক্যামেরার মাধ্যেমে দ্রুত অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাবে বলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের অনেকটাই সুরক্ষিত মনে করছে বলে জানান ফারুক।

বনগ্রাম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আল মামুন কবির রিপন বলেন, আমাদের হাটে প্রায় চার শতাধিক ব্যবসায়ী আছেন, যাদের একটি বড় অংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের। আমাদের মধ্যে কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই। অথচ, বহিরাগত ও কিছু সুযোগ সন্ধানী অপরাধীরা এখানে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। অতীতে প্রমাণ না থাকায় আইনের ফাঁক গলে অনেকেই পার পেয়ে গেছে। এখন শুধু বনগ্রাম হাট নয় বরং পুরো বনগ্রাম এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকবে ফলে অপরাধীরা অপরাধ কর্মকান্ড ঘটানোর সাহস পাবে না বলে জানান তিনি।

পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যকারিতা পরীক্ষিত। জেলা পুলিশ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করে হাট ও বাজারগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগীতাও মিলছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার হাট ও বাজারগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হলে জনবহুল এ সব হাট-বাজারে অপরাধ কর্মকান্ড কমে যাবে।