অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আগামী বাজেট হোক করোনা প্লাস

আমিনুর রহমান

প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ২৫ মে ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০১:১৫ পিএম, ২৫ মে ২০২১ মঙ্গলবার

আসছে জুনে বাংলাদেশের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে। বাজেটকে ঘিরে যে কয়েকটি খাত নিয়ে মানুষের বেশ আগ্রহ রয়েছে তম্মধ্যে করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অন্যতম। তবে আগামী বাজেটে অতিমারী করোনা মোকাবেলা ছাড়াও স্বাস্থ্যখাতের আরও কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এই লেখায় সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। 

দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় স্বাস্থ্যখাতকে কেন্দ্রে রাখা প্রয়োজন। ২০২০-২০২১ বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে মোট বারাদ্দের পরিমাণ প্রস্তাব করা হয়েছিলো ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৭ দশমিক ২ শতাংশ। তার আগের বাজেটের তুলনায় ২০২০-২০২১ বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছিলো ৩৩ শতাংশ যার অন্যতম লক্ষ্য ছিলো করোনার ক্ষতি মোকাবেলা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন করা। তবে বিভিন্ন বছরে স্বাস্থ্য বিভাগ বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি বলে জানা যায়।    

মূলত, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটি কি প্রতিকারমুলক নাকি প্রতিরোধমুলক হবে সেটি আগে ঠিক করা প্রয়োজন। রোগ যদি প্রতিরোধ করা যায় তাহলে তার চিকিৎসার চাহিদা ও চিকিৎসায় ব্যক্তির ব্যয় কমানোও সম্ভব। ফলশ্রতিতে, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাও রক্ষা করা যাবে।

গ্লোবাল হেলথ সিকিউরিটি ইনডেক্স-এ বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫.০ স্কোর নিয়ে ১৯৫ দেশের মধ্যে ১১৩ তম। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত (৫৭ তম) নেপাল (১১১ তম) এমনকি পাকিস্তানের (১০৫ তম) থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। এছাড়া চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে প্রতিবছর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায় প্রতিবছর শুধু ভারতেই ৬ থেকে ৭ লাখ লোক যায় চিকিৎসার জন্য। অন্যদিকে ভারতের চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে ভারতে আসা মোট রোগীর ২২ শতাংশই বাংলাদেশের। 

যাইহোক, অতিমারী করোনা নতুন করে উপলব্ধি করিয়েছে যে, চিকিৎসা সেবার জন্য বিদেশের উপর নির্ভর করা কোন স্থায়ী সমাধান নয় বরং নিজ দেশেই চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। তবে সেজন্য প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিয়ে চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কেননা বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে অবকাঠামো, জনবল ও দক্ষতার ঘাটতির কারণে চাহিদা (ডিমান্ড) এবং যোগান (সাপ্লাই)-এর মধ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। সরকারি হাসপাতাল এমনকি বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসকদের যথেষ্ট সময় নিয়ে রোগী না দেখা, নার্স বা আয়াদের সেবায় অসন্তোষ, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বের ঘাটতি প্রভৃতি অভিযোগ নিয়মিত শোনা যায়। কিন্তু তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় জনবল ও দক্ষতার ঘাটতির কারণে হাসপাতালগুলোর পক্ষে যথার্থ সেবা প্রদান আসলেই অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ১০,০০০ মানুষের বিপরীতে চিকিৎসক আছে মাত্র ৬ জন, নার্স ও ধাত্রী আছে ৪ জন এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মী আছে ৫ জন করে যা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা ২০১০ সালে প্রয়োজনীয় মাতৃ ও শিশু সাস্থ্য সেবার জন্য ৪৯ টি দেশকে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দেশ হিসেবে তালিকাবদ্ধ করে যেখানে প্রতি ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে ২৩ জন করে চিকিৎসক, নার্স ও ধাত্রী থাকবে বলে নির্ধারণ করে। বাংলাদেশ এ তালিকায় থাকলেও সেই লক্ষ্য এখনও অর্জন করতে পারেনি। বাস্তবে দেখা যায় একজন চিকিৎসককে যে পরিমাণ রোগী দেখতে হয় তা অনেক সময় তাদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ফলে, সেবা প্রদানের সাথে যুক্ত জনবল ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। সাথে সাথে ব্যবস্থাপনাগত বিকল্প উদ্ভাবন করে তার সংকট কতটা কমিয়ে আনা যায় তার ব্যবস্থা করা দরকার।     

পাশাপাশি চিকিৎসা সরঞ্জাম বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রেখে স্থানীয় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে কোন ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার তা জানতে পৃথক গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে মাঠপর্যায়ের চাহিদা যাচাই (নিড এসেসমেন্ট) করতে হবে। সব এলাকার জন্য একই উন্নয়ন না করে শহর ও গ্রামের আলাদা বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিতে হবে। শুধু চাহিদার ভিত্তিতেই বাজেট বাড়ালে অপচয় যেমন কমিয়ে আনা যাবে তেমনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করাও সম্ভব হবে। 

সাধারণত সরকারি হাসপাতালগুলোতে যাওয়া রোগীর বেশিরভাগই দরিদ্র যাদের বেশি অর্থ খরচ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও দামি ঔষধ ক্রয়ের সামর্থ্য কম। অন্যদিকে দেখা যায় হাসপাতালগুলোতে সাধারণত কমদামি যেমন ভিটামিন এ, ডি প্রভৃতি দেওয়া হলেও দামি ঔষধ (যেমন অ্যান্টিবায়োটিক) তেমন দেওয়া হয়না আবার জেলা-উপজেলা পর্যায়ের রোগীদেরকে ভালো মানের পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আসতে হয়। তাই দামি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহে এবং পরীক্ষা সরঞ্জামের জন্য বাজেট বাড়ানো দরকার। 

বিত্তবানদের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের জন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত না করে বরং এসব প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট কর্মসংস্থান, পেশাদারিত্ব ও মান বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। তবে, সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে অন্তত যেন দেশের সরকারি কর্মকর্তাগণ বা শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা চিকিৎসা নিতে যান তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থা বাড়বে।
   
করোনা বাড়ার সাথে সাথে দেশে ভেন্টিলেটর এবং সাধারণত ও আইসিইউ আসনের সংকটের কথা বলা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা শহরে সরকারি হাসপাতাল ২৫৫৫ সাধারণ ও ১২৮ আইসিইউ আসন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৭২ সাধারণ ও ১৮০ আইসিইউ আসন রয়েছে বলে জানা যায়। করোনা সংকট ছাড়াও অন্যান্য সময়ে জেলা পর্যায়ের মুমূর্ষ রোগীদের আইসিইউ-এর প্রয়োজন হলে ঢাকা নিয়ে আসতে হয় যা অনেক মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যায়। এজন্য জেলা পর্যায়ের অন্তত প্রধান হাসপাতালগুলি যেমন সদর হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে সাধারণ ও আইসিইউ আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে। 

বয়স ও সামাজিক শ্রেণী অনুযায়ী মানুষের বিশেষ বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন কিশোর-কিশোরীদের জন্য আলাদা সেবা ও কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা, পাচার ও বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য মনো-সামাজিক চিকিৎসা কেন্দ্র রাখা ইত্যাদি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত ’কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে রোগ গোপন রাখার প্রবণতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে অনেকটা সফল হয়েছে। 

আবার, বিভিন্ন দুর্গম, আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা বা এলাকাসমূহে স্বাস্থ্য সেবা সম্পকির্ত তথ্যের প্রচারণামুলক কার্যক্রম বাড়ানো এবং এসব অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে সেবার পরিধি বাড়ানো ও চিকিৎসার জন্য ব্যক্তির ব্যয় কমানো প্রয়োজন। এজন্য সমীক্ষার মাধ্যমে দেখতে হবে যে, অঞ্চলভেদে রোগের ধরন অনুযায়ী আক্রান্তের হারে ভিন্নতা আছে কিনা। যেমন, গ্রামের ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি জনিত স্বাস্থগত সমস্যা বেশি আবার শহরের উচ্চ আয়ের পরিবারগুলিতে শিশুদের মধ্যে অতিপুষ্টি জনিত সমস্যা বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, এমন পার্থক্য দেখা যায় বয়স্ক এমনকি যুবকদের মধ্যেও। সুতরাং এই সামাজিক বাস্তবতা আমলে নিয়ে গ্রাম, শহর বা নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে যেমন বস্তি এলাকার চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে কোন ধরনের রোগের চিকিৎসার চাহিদা বেশি সে অনুযায়ী সেবা বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।       

বর্তমানে দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ রয়েছে ৮.২ শতাংশ। ক্রমশঃ গড় আয়ু বাড়ার সাথে সাথে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে, এই বয়স্ক মানুষের জন্য সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার চাহিদার বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রামীণ এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি সাধারণত বয়স্কদের বার্ধক্যজনিত অনেক রোগের যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারেনা। বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরো বেশি। এজন্য উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে সেসব সেবাসমূহ বাড়ানো দরকার।   

টীকা সংগ্রহের জন্যও সরকারের বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন হবে। বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে বর্তমান এবং তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাব্য আক্রমণ মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার সরঞ্জাম সহজলভ্য করা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত কিনে রাখা এবং দামি ঔষধগুলোর ওপর ভর্তুকী দিয়ে গরীর রোগীদের নাগালে আনা প্রয়োজন। এছাড়া, যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলিকে আর্থিক সহযোগীতার পাশাপাশি বিশেষ সামাজিক মর্যাদা দেয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যযোদ্ধা হিসাবে তাদেরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া যায় কি-না তা ভেবে দেখা দরকার। করোনায় মৃতদের সৎকারে যেসব স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে তাদেরকে বিশেষ আর্থিক সহযোগীতা দেয়া যেতে পারে।        

করোনা চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অন্যান্য সাধারণ ও নিয়মিত-অনিয়মিত বা মৌসুমি রোগের চিকিৎসায় যাতে বরাদ্দ না কমে যায় এবং সেবা প্রদান ব্যাহত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন, বছরের একটি নির্দষ্ট সময়ে মশার উপদ্রপ বেড়ে যায় ফলে তখন ডেঙ্গু বেড়ে যেতে পারে। ফলে তা মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত মশা নিধন কার্যক্রম, ঔষধ ও পূর্ব-প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে মানুষ সাধারণ চিকিৎসার জন্য দূরের হাসপাতালে যেতে চায় না ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী করোনা কালে স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় বাংলাদেশে শিশু মৃত্যু বেড়েছে ১৩ শতাংশ। ফলে উপজেলা এমনকি কমিউনিটি ক্লিনিকে যেন যতদূর সম্ভব প্রয়োজনীয় সেবা পায় সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

এছাড়া অতিমারীর মধ্যে গর্ভবর্তী মায়েরা বাড়িতেই সন্তান প্রসবকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বা বাধ্য হয়েছে। ফলে, ভবিষ্যত ঝুঁকি মোকাবেলায় কমিউনিটি পর্যায়ে উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা (SACMO),  পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিক (FWV)  এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ধাত্রীদের দক্ষতা ও সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।  

যাইহোক, আমাদের মূল সুপারিশগুলো হচ্ছে: স্বাস্থখাতে উন্নয়নের জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ (ডিমান্ড কন্ট্রোল) করতে হবে; প্রয়োজন এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে খাতওয়ারী বরাদ্দের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে; বরাদ্দের ক্ষেত্রে সার্বজনীন না করে এলাকা, বয়স, লিঙ্গ, অর্থনৈতিক অবস্থা, সাংস্কৃতিক আচরণ প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে; প্রতিবন্ধী, নির্যাতনের শিকার নারী-পুরুষ, বয়স্ক এবং অন্যান্য মানসিক রোগীর স্বাস্থ্যসেবা চাহিদাকে আমলে নিতে হবে; চিকিৎসকসহ সংশ্লিস্ট জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সংকট মোকাবেলার জন্য বিকল্প উপায় নির্ণয় করতে হবে; সরকারি হাসপাতালে সেবার পরিধি, আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ পর্যাপ্ত সারঞ্জাম বৃদ্ধি ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে; অতিমারী মোকাবেলায় সকল অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; সকল মৌসুমি রোগের চিকিৎসা এবং শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য সেবা যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও বরাদ্দ রাখতে হবে। স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ এবং ব্যয়কে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।    

আমিনুর রহমান: গবেষক, সোশ্যাল এন্ড জেন্ডার ডিভিশন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট। তিনি শিশু অধিকার, শিশু সুরক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্য, জেন্ডার, সামাজিক অসমতা প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা করে থাকেন।