অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

দেশে প্রথম ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শনাক্ত, কতটা বিপজ্জনক?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৮ এএম, ২৫ মে ২০২১ মঙ্গলবার  

দেশে প্রথমবারের মতো দুজনের শরীরে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শনাক্ত হয়েছে। তাদেরকে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ভারতে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে দেশটিতে রোগটিকে মহামরি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের এমন পরিস্থিতিতে সতর্ক করা হয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে। এর মধ্যেই দুজনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়েছে। 

বারডেম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. লাভলি বাড়ৈ গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে গত ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেকজনের দেহে রোগটি শনাক্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। বারডেমের ল্যাবরেটরিতে করোনা রোগীর শরীরে এবারই প্রথম রোগটি শনাক্ত হয়।  
ডা. লাভলি বাড়ৈ জানান, করোনা চিকিৎসায় মাত্রা নির্ধারণ না করে স্টেরয়েড নেয়ায় এমন রোগ দেখা দিতে পারে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে অবস্থা গুরুতর হতে পারে। তাই, তাদের সতর্কভাবে চিকিৎসা দিতে হয়।

কী এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস?

ইউএস সেন্টারস অফ ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি অনুসারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস মাটি এবং পচা পাতার মতো ক্ষয়কারী জৈব পদার্থের মধ্যে পাওয়া একটি ছত্রাক। শরীর দুর্বল হলে মূলত আক্রমণ করে এই ছত্রাক। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত রোগীরা বেশি দিন আইসিইউ-তে থাকলে এবং তাঁদের উপরে স্টেরয়েডের ব্যবহার বেশি হলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এমন ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সহজেই ঢুকে পড়ে শরীরে। এছাড়াও ময়লা জলযুক্ত অক্সিজেন ট্যাঙ্কগুলির ব্যবহারের মাধ্যমেও হাসপাতাল এবং বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে এই ছত্রাক।

কতটা বিপজ্জনক এটি?

ভয়াবহ এই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে খুব শীঘ্রই রোগ নির্ণয় করা উচিত। এটি মস্তিষ্কের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আগেই রোগীদের নাক, চোখ বা এমনকি তাদের চোয়াল অপারেশন করে বাদ দিতে হতে পারে। সিডিসি অনুসারে, এই রোগে গড় প্রাণহানির হার ৫৪ শতাংশ। এই রোগে আক্রান্ত হলে কয়েক দিনের মধ্যেই মানুষ মারা যেতে পারে, তবে এটি সংক্রামক নয় সিডিসির মতে। সাধারণত ডায়াবিটিস রোগীরা এবং ক্যানসার-আক্রান্তরা সমস্যায় পড়ছেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হলে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মূলত তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের দীর্ঘদিন রোগভোগের জেরে শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। শরীরের কোনও অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে, ক্যানসার রয়েছে এই ধরণের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ভেন্টিলেটরে রয়েছেন যারা তাদের ক্ষেত্রেও রয়েছে যথেষ্ট আশঙ্কা। এমনকি স্টেরয়েডের ভুল ব্যবহারের জেরে তৈরি হতে পারে সংক্রমণের আশঙ্কা।

করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য কেন এটি বিপজ্জনক?

করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বিপদজনক কারণ করোনা রোগীর চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে অনেক সময়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যার জেরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সেই রোগীর শরীরে বাসা বাধার সহজেই সুযোগ পাচ্ছে। করোনা রোগীরা যখন বেশ কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠছেন, সে সময়ে নতুন এই সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। তাই করোনা-চিকিৎসায় স্টেরয়েড কম ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।