শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০ || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

২০২০ এর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি ‘আশার বাতিঘর’

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

১৩:১৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৩:২৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

১০৯৭

২০২০ এর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি ‘আশার বাতিঘর’

নিয়মিত লেখালেখির একটা প্যাটার্ন আছে। বছর শেষে লিখতে বসলে লিখতে হয় বছরভর কি পেলাম আর কি পেলাম না। এই নিয়ে লিখতে বসাটা কখনই সহজ না। প্রথমতঃ সাড়া বছর জুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কোনটা বাদ যাবে আর কোনগুলো উঠে আসবে প্রবন্ধের স্বল্প-পরিসরে সেগুলো বাছাই করা যেমন চ্যালেঞ্জিং, চ্যালেঞ্জিং তেমনি সেগুলোকে পাঠকের প্রত্যাশার সাথে মেলানোও। পাশাপাশি এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে লেখেন প্রথিতযশা আর প্রতিষ্ঠিত সব কলামিষ্টরা। এবারেও যেমন লিখেছেন শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও আরো অনেকে। এক কথায় অসাধারণ। কাজেই কলম না ধরলে যেমন বিপদ, ধরলেও কলমের কাপাকাপিতে লেখা আগায় সামান্যই। তারপরও লেখা - কারণ বিষয়টি নিয়ে না লিখলে, লেখা-লেখির প্রতি ঠিক সুবিচার করা হয়ে উঠে না।

লিখতে বসে দেখছি এ বছরের পাওয়ার হিসাবটা শুধুই অপ্রাপ্তিতে ভরা। কে কোথায় চীনের কোন ফুড মার্কেটে বসে খেলো বাদুর আর তার জন্য খেসারত দিচ্ছে হচ্ছে গোটা দুনিয়ার সব মানুষকে। একেকটা সমৃদ্ধ অর্থনীতির ভয়াবহ পতন আর পৃথিবী জুড়ে অগনিত মানুষের মৃত্যুর মিছিলে ২০২০ অনাগত ভবিষ্যতে কালো কালিতে লেখা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এদেশেও আমরা কোভিডের ধাক্কাটা খেয়েছি খুব জোড়ে। হারিয়েছি সাত সহ¯্রাধিক তরতাজা মানুষকে। ঝড়ে গেছেন মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, তারেক আলী আর ক্যাপ্টেন আকরাম-এর মতন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আলী যাকের, আব্দুল কাদের-এর মতন সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের একেকটা নক্ষত্রকেও। নক্ষত্রের পতন হয়েছে ব্যবসায়িক অঙ্গনেও। ঝড়ে গেছেন দেশের ব্যবসার অনেক  দিকপাল। আমার পেশার জায়গায় আমি হারিয়েছি আমার শতাধিক চিকিৎসক সহকর্মীকে। একইভাবে হারিয়ে গেছেন সাংবাদিক, পুলিশ আর প্রশাসনের নাম জানা-অজানা আরো কত গুনি মানুষ। 

ধাক্কা লেগেছে আমাদের অর্থনীতিতেও। আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি এক ধাক্কায় পাচের কোঠায়। তাও ভালো, প্রতিবেশি অনেকের মত ঋনাত্বকের ঘরেতো পৌছায়নি। জীবন যুদ্ধে আপাত আত্মসমর্পন শেষে অনেকেই ছেড়ে গেছেন সাধের রাজধানী শহর ঢাকা। পেশার পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন আরো অনেকেই। কোভিডের ধাক্কা এমন এক ধাক্কা যা রেহাই দেয়নি পৃথিবীর কোন দেশে কাউকেই, রেহাই পায়নি আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কোথাও কোন দেশেই। ২০২০ তাই শুধুই না পাওয়ার আর হারানোর বছর। আর সেই না পাওয়া আর হারানোর তালিকাটা এতটাই অশেষ যে তা তালিকাবদ্ধ করে শেষ করাটাও অসম্ভব। 

এত অপ্রাপ্তির আর বেদনাবিধুর ২০২০’এ প্রাপ্তির আনন্দ একটাই। চলমান বৈশ্বিক দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে এই আনন্দটা অবশ্য শুধুই আমাদের এবং এটিও সত্যি যে এটি আামাদের জন্য  নতুন কোন প্রাপ্তি নয়। এই প্রাপ্তি বাঙালী জাতি আর বাংলাদেশের জন্য তার ‘আশার বাতিঘরকে নতুন করে খুজে পাওয়ার’। কারণ তার কারণেই আমরা হতাশায় না ডুবে দেখছি নতুন করে বাচার স্বপ্ন। তিনি এই করোনার গহিন আধারে পদ্মার একুল-অকুল জুড়ে দিয়ে আমাদের ভবিষ্যতকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। কোভিডের ডামাডোলে আবারো মাথাচারা দিয়ে ওঠার ফাক-ফোকর খুজতে থাকা মৌলবাদকে বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশ্য দেয়া তার ভাষণে আরো একবার লালকার্ড প্রর্দশন করেছেন তিনি। দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিড মোকাবেলায় তার কারণেই বাংলাদেশের অবস্থান সবচাইতে সুসংহত আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চলমান কোভিড মাহামারীতে নিরাপদের তালিকায় বাংলাদেশ ব্লুমবার্গ র‌্যাঙ্কিং-এ বিশতম স্থানে। 

ইউরোপের দেশে-দেশে যখন কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কায় পর্যদুস্ত বড় দিন আর নববর্ষ, অর্থনীতিগুলো আবারও যখন স্থবির আল্টান্টিকের এপার-ওপারে আর প্রশান্ত মহাসাগরের এ মাথা থেকে ও মাথায়, তখনও জীবন আর জীবিকা বহাল তবিয়তে চলমান দক্ষিণ এশিয়ার এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে। একের পর এক নামি-দামি বিমান সংস্থা যখন দেশে-দেশে গ্রাউন্ডেড তখন এই মহিয়সী নারীর একক কৃতিত্বে উর্দ্ধগগনে উড়ে চলা বাংলাদেশের বেসারিক বিমান বহরের সর্বশেষ সংযোজন ‘ধ্রুবতারা’ও তার নেতৃত্বে এই করোনাকালেও উড়তে থাকা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। ২০২০ সারমর্ম লিখতে বসে আমার কাছে এ বছরের শ্রেষ্ঠ পাওয়া তাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নতুন করে খুজে পাওয়া।    
 
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল): চেয়ারম্যান, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank