শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

টিকায় পিছিয়ে থাকা চলবে না

এরশাদুল আলম প্রিন্স

১৫:৫৪, ২৯ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ১৬:১৬, ২৯ আগস্ট ২০২১

৭৫৩

টিকায় পিছিয়ে থাকা চলবে না

এরশাদুল আলম প্রিন্স
এরশাদুল আলম প্রিন্স

করোনায় ৬৩ দিন পর মৃতের সংখ্যা একশোর নিচে নামলো। এ নিয়ে দেশে করোনায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৯২৬ জন।

করোনা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও গত ১১ আগস্টের আগেই সব কর্মজীবী মানুষকে করোনার টিকা গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। এত কম সময়ে সব কর্মজীবী মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। সেটা সম্ভব হোক বা না হোক, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের জন্য একটি সর্বজনীন টিকাদান কর্মসূচি হাতে নিতে হবে ও সেটি সফল করতে হবে। সরকারও সেদিকেও অগ্রসর হচ্ছে।

সরকার জনগণকে টিকা নেয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। টিকার ব্যাপারে জনগণের প্রথম দিকে যে অনীহা ও সন্দেহ ছিল তা অনেকটাই এখন কেটে গেছে। এখন যেটুকু দোটানা রয়েছে তা মূলত টিকা ব্যবস্থাপনার জন্যই। এর আগে অনেকেই প্রথম ডোজ দেয়ার পর আর দ্বিতীয় ডোজের দেখা পাননি। টিকা সংগ্রহ, সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকায়ই এমন হয়েছে। কিন্তু তারপরও অধিকাংশ মানুষই টিকা নিতে আগ্রহী। টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এসবই ইতিবাচক।

বর্তমানে বিশ্বে ১১টি টিকার উৎপাদন হচ্ছে। এত টিকা থাকার পরও টিকার কার্যকারিতা নিয়ে বৈশ্বিকভাবেই এক ধরনের সন্দেহ আছে। কিন্তু তারপরও মারাত্মক সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমাতে এ মুহুর্তে টিকার চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই।

গত ৭ আগস্ট থেকে দেশের ১৪ হাজার কেন্দ্রে থেকে টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে। টিকাদানের হারও আশাব্যঞ্জকও বলতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশার বাণী শুনিয়েছে। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দৈনিক প্রায় ২৭ লাখ ৮৩ হাজার মানুষকে টিকা হচ্ছে (প্রথম ডোজ)। আর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে প্রায় ৫৪ হাজার মানুষকে। সংখ্যাটা আশাবাদী হওয়ার মতোই। কাজেই, প্রয়োজনীয় লোকবল ও লজিস্টিক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে সবার জন্য টিকাদান কর্মসূচি সফল হবে সন্দেহ নেই।

শুধু বিভাগ বা জেলা নয়, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়েও টিকা পৌঁছাতে হবে। সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে যে গণটিকা কর্মসূচি রয়েছে তাতে পূর্ব নিবন্ধন ছাড়াই প্রার্থীরা টিকা দিতে পারবেন। শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই টিকা দেয়া যাবে। পাশাপাশি নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা নেয়ার কার্যক্রম চালু আছে। কাজেই, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে হলে সেখানে টিকার সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

গত প্রায় দেড় বছর ধরে সরকার নানাভাবে জনগণকে সতর্ক ও সচেতন করার চেষ্টা করেছে। বারবার লকডাউন দিয়েছে। কিন্তু জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেনি। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সরকারের সমালোচনা করে কোনো ফায়দা নেই। আমরা সরকারের সমালোচনা করে নিজেদের দায় এড়াতে পারি না।  

করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতেও আমাদের বাজার-সদায়, বিয়ে সামাজিকতা, খেলাধুলা-মারপিট কোনোকিছুতেই কমতি নেই। স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের লোক যাতে বিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করতে না আসে সে জন্য আগে থেকেই লবিং করা হয়েছে। যারা লবিং করতে পারেননি তারা ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুণে বিয়ের অনুষ্ঠান সফল করেছেন। ফলে ‘লকডাউন দেখতে বাইরে যাওয়া’ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কার্যকর টিকাদান কর্মসূচির বিকল্প নেই।

দিনের পর দিন ঘরে বসে খাওয়ার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের নেই। শ্রমজীবী মানুষকে রোজগারের জন্য ঘরের বাইরে বের হতেই হয়। এদিকে এই দীর্ঘ সময়ে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও সচেতন করা যায়নি। মাস্ক পরতেও সবার দমবন্ধ অবস্থা আরকি। ফলে ’কর্মস্থলে যোগ দিতে হলে টিকা দিতে হবে’ এমন একটি বাধ্যবাধকতা আরোপ করলে শ্রমজীবীদের মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি সফল হতে পারে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে টিকা নিয়ে অবস্থাপনা হলে সেটি কি সরকার পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব? হয়তো সম্ভব না। তবে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার যেনো পিছপা না হয় সেটি গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে অনিয়ম দূর হবে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে এসছে। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি বুথে একজন স্বাস্থ্যকর্মী টিকাপ্রার্থীদের শরীরে সুচ ঢুকালেও টিকা না দিয়ে পাশের মেঝেতে রাখা ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছেন। চট্টগ্রামের পটিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সেখানে মজুত টিকা থেকে দুই হাজার ডোজ সরিয়ে ফেলে অন্য এলাকায় ওই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। টাকার বিনিময়ে টিকা দেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

এখনো পুরোদমে টিকা দেওয়া শুরু হয়নি। বলা যায়, পাইলট প্রকল্প হিসেবেই চলছে। তার আগেই স্থানীয় পর্যায়ে এরকম পাইলট অনিয়মকে ভবিষ্যতে মেগা অনিয়মের আলামত হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। কাজেই স্থানীয় পর্যায়ে আর যেন কোনো সাহেদ-সাবরিনার জন্ম না হয় সেদিকে এখনই নজর রাখতে হবে।

দেশের সব মানুষকে টিকা দেয়ার মতো টিকা সরকারের হাতে এখনও আসেনি। আসার প্রক্রিয়ায় আছে। প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া শেষ হওয়ার আগেই এর পরবর্তী ডোজ আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে বাকি জনগোষ্ঠীর জন্যও প্রথম ডোজের ব্যবস্থাও করতে হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটি দুইটি শিপমেন্টের বিষয় নয়। তা না হলে আগের বারের মতো অবস্থা হবে। এক ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো টিকা আর হাতে থাকবে না। মানে প্রথম ডোজের জন্য সরকারে অর্থ, মানুষের কষ্ট ও সময় সবই বৃথা। 

সরকারের টিকাদান কর্মসূচীকে কোনোভাবেই অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ একটি দেশের জন্য টিকা পাওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকার টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্বের কয়েকটি ধনী দেশ টিকা তৈরির ফর্মুলা নিজেদের মধ্যে রেখেছে। তারা আগে নিজে বাঁচি নীতি গ্রহণ করেছে। নিজেদের জন্য যথেষ্ট মজুদ সংগ্রহে রেখে তারপরই রপ্তানি করছে। এছাড়া টিকা তৈরির কোম্পানিগুলোর বাণিজ্য ভাবনাতো আছেই। এমন পরিস্থিতিতে টিকা পাওয়াই বড় কথা। কাজেই এই টিকাকে শুধু স্বাস্থ্যমূল্য ও অর্থমূল্য দিয়ে বিবেচনা করলেই হবে না। এর কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক মূল্যও কম নয়।

বিশ্বে এ পর্যন্ত ৪১৮ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর সিংহভাগই পেয়েছে উচ্চ আয়ের দেশগুলো। উন্নত দেশগুলোয় প্রতি ১০০ জনে ৯৮ জন টিকা পেয়েছে। আর আমাদের মতো দেশগুলোতে এই হার ১ দশমিক ১ শতাংশ। টিকা পাওয়ার এই হার নিয়ে করোনার মতো বিশ্বমারি মোকাবিলা করার কথা ভাবাও যায় না। কাজেই টিকা নিতেই হবে, এবং অপরকেও নিতে উৎসাহ দিতে হবে।

একদিকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলিনি। এখন যদি গণটিকা কর্মসূচিও সফল না হয় তবে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলাই বাহুল্য। টিকাদান কর্মসূচি সফল করা অসম্ভব কিছু নয়। আমাদের বিদ্যমান সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) ধারাবাহিকভাবে সাফল্য দেখিয়েছে। কাজেই এই মডেলটি কাজে লাগালে আশান্বিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। টিকা সংগ্রহ, সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। প্রয়োজনীয় লজিস্টিক বাড়াতে হবে। সরকারের সদিচ্ছা ও কঠোর নজরদারি ও বিভিন্ন পর্যায়ে এই কার্যক্রমের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেলে টিকাদান কর্মসূচি সফল হবে।

এরশাদুল আলম প্রিন্স: আইনজীবী, কলামিস্ট

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank