শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০ || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

উন্নয়নশীল বাংলাদেশে উত্তরণ নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী

১৬:২৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৭:২৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

৬৭৭

উন্নয়নশীল বাংলাদেশে উত্তরণ নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

একটি উন্নয়নশীল বাংলাদেশের উত্তরণকে নতুন প্রজন্মের জন্য উৎসর্গ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। 

তিনি বলেন, একটি মহৎ ও গৌরবের খবর আপনাদের জানাতে এখানে হাজির হয়েছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পেয়েছি। আমাদের এ উত্তরণ এমন একটি সময়ে ঘটলো যখন আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করছি, স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা অত্যন্ত আনন্দের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। 

শেখ হাসিনা স্মরণ করেন জাতির পিতার সেই স্মৃতি, যখন তিনি সদ্য স্বাধীন দেশে ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশকে স্বল্পন্নত দেশে রূপান্তর করতে পেরেছিলেন। 

এরপর তারই নির্দেশিত পথে চলে ৫০ বছরে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটাতে পারলাম। 

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। 

শেখ হাসিনা বলেন, এ কৃতিত্ব দেশের সকল জনগণের। এ অর্জনে আমি আজ দেশের সকল নাগরিককে অভিনন্দন জানাচ্ছি। 
তিনি বলেন, জাতির একজন নগন্য সেবক হিসেবে এই অর্জনের অংশীদার হতে পেরে আমি গর্বিত। আমি এই অর্জনকে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য উৎসর্গ করছি। কারণ এই নতুন প্রজন্মই আমাদের দেশকে পরবর্তি স্তরে উন্নীত করে নিয়ে যাবে। 

শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন হয়েছে বিজয়। বিজয়ের আগে বাংলাদেশের সমস্ত অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূণ্য হাতে দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। সবার প্রতি সহযোগতির হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় দেশের জিডিপি ছিল ৭ শতাংশ। কিন্তু দূর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনের জন্য যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন তা তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। তাকে হত্যা করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল। 

১৫ আগস্টের পর ২১ বছর ধরে দেশে ছিল অরাজকতা এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  তখন দেশের ভাবমূর্তি ছিল খরা বন্যার দেশ,  ভিক্ষুকের দেশ। তখন খাদ্যের জন্য বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকতো ৭৫ পরবর্তী সরকার । গ্রামগুলো ছিল সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। গ্রামে বিদ্যুত, রাস্তা-ঘাট প্রভৃতি কিছুই ছিলনা। দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকতো দেশে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এর পরে ছয়বছর দেশে আসতে পারেননি তিনি। স্বৈরাচার সরকার আসতে দেইনি। জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর, তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেছেন। মানুষের কষ্ট দেখে তিনি প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন,  গ্রামকে অগ্রাধিকার দিবেন। গ্রামের মানুষের উন্নয়নে  কাজ করবেন। কারণ সেসময় ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করতো। 

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করতে থাকে সরকার। সামাজিক সুরুক্ষা , কৃষি উৎপাদনে গুরুত্ব দেয়া হয়। বলেন, ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ। মাঝখানে ৫ বছর ছিল, জামাত বিএনপি। সেসময় ব্যাপক হত্যা, দুর্নতি, লুটপাট ছিল। তারপর ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করে যা্চ্ছে আওয়ামী লীগ। ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন জনগণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। আমাদের এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এটি একটি বিশেষ ধাপ।

মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা—এই তিনটি সূচকের ভিত্তিতে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে উল্লেখ করে সরকার প্রধান জানান, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডই খুব ভালোভাবে পূরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ পুনরায় সকল মানদণ্ড অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পূরণের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের পর্যালোচনায় ২০১৯ সালে মাথাপিছু আয়ের মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ১ হাজার ২২২ মার্কিন ডলার। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮২৭ ডলার। আর বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ মানদণ্ডের প্রায় ১.৭ গুণ। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদণ্ড ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫.৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৭।

"এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।"

আর্থিক এবং অন্যান্য সূচকগুলির দিকে লক্ষ্য করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাচ্ছে।  ২০০৮-০৯ বছরে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ সালে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই ১২ বছরে সরকারি ব্যয় ৪.৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৭ হাজার ৯৬০ কোটি থেকে ২০১৯-২০ বছরে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা হয়েছে। ২০০৮-০৯ বছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫.৫৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮-১৯ বছরে তা ৪০ দশমিক পাঁচ-চার বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ বছরের ৭ দশমিক চার-সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪৪ দশমিক শূন্য-তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০১ সালে আমাদের দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২০.৫ ভাগ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশে।

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ং-সম্পূর্ণ, আবারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয় এবং মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও স্বয়ং-সম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।

বিদ্যুতে অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, ২০০৯-১০ বছরে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল মাত্র ৫,২৭১ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

মানুষের গড় আয়ুর হিসাবও তিনি তুলে ধরেন বক্তৃতায়। ২০০৯-১০ বছরের ৬৯.৬১ বছর থেকে বেড়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২.৬ বছর। ২০০৯-১০ বছরের তুলনায় ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ২৮। মাতৃমৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে লাখে ১৬৫ জনে, যা ২০০৯-১০-এ ছিল ২৮০ জন।

মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল গৃহহীনদের ঘর প্রদান কর্মসূচির আওতায় ৮ লাখ ৯২ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, জানান প্রধানমন্ত্রী।

নারীর ক্ষমতায়নের কথা উঠে আসে বক্তৃতায়। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ স্বাবলম্বী। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭ম।

করোনাকালে অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে তিনি জানান, এই প্রনোদনা যা মোট জিডিপির ৪.৪৪ শতাংশ।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত