বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বাংলাদেশ স্বাধীন হবে তাই ছেলের নাম জয় রাখতে বলেন বঙ্গবন্ধু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৫:০০, ২৭ জুলাই ২০২১

আপডেট: ১৫:০১, ২৭ জুলাই ২০২১

৫২৩

বাংলাদেশ স্বাধীন হবে তাই ছেলের নাম জয় রাখতে বলেন বঙ্গবন্ধু

করোনার কারণে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনে তার সঙ্গে থাকতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উদযাপন ও ‘জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার সকালে যুক্ত হয়ে তিনি এ আক্ষেপ করেন।

অনুষ্ঠানে ছেলের জন্মদিন প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জয়ের নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছাতেই ছেলের নাম জয় রাখার কথা জানান তিনি। ২৬ মার্চের পরের সময়ে পরিবারের ওপর যে নির্যাতন নেমে এসেছিল, তা-ও বর্ণনা করেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ, আমি তখন কেবল সন্তানসম্ভবা। এদিন আপনারা জানেন পাকিস্তান দিবস হিসেবে ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায়। সারা বাংলাদেশে কেউ কিন্তু পাকিস্তানি পতাকা ওড়ায়নি। সব বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়েছিল।

‘৩২ নম্বরের বাড়িতেও সেদিন আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। যদিও পাকিস্তানের শাসক ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায় ছিল, তারা অস্বীকার করেছিল।’

‘আমি সাধারণত আমার বাবার হাতের নখ, পায়ের নখ কেটে দিতাম। এটা আমার একটা নিয়মিত কাজ ছিল। তিনি বৈঠক করে এসে যখন বিশ্রাম নিতে বসেছেন দুপুরে, আমি তখন তার পাশে এসে নখ কেটে দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বলছেন, ভালো করে কেটে দে আর এই সুযোগ পাবি কি না। তবে তোর ছেলে হবে এবং সেই ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেবে। তার নাম জয় রাখবি। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পরেই আমাদের বাসাটা আক্রমণ করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।’

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠকন্যা বলেন, ‘এর কিছু মুহূর্ত পূর্বে আমি আমার ছোট বোন রেহানা এবং আমার খালাতো বোন জেরিকে বাসা থেকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয়। বাবা জোর করেই পাঠিয়ে দেয়। আর আমার ভাই কামাল আগেই চলে গিয়েছিল বেরিকেড দিতে। জামাল আর রাসেল মাকে ছেড়ে যাবে না, মার সাথেই থেকে যায়।

‘বাবাকে গ্রেপ্তারের কিছুদিন পরে আমার মা আমার ছোট ভাই রাসেল, জামাল আমি আর রেহানা গ্রেপ্তার হই। ১৮ নম্বরের রোডের একটি পরিত্যক্ত বাসায় আমাদের রাখা হয়।’

এ সময় বন্দিদশায় থেকে সন্তান জন্ম দেয়ার অভিজ্ঞতা শোনান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘যখন আমার সন্তান প্রসবের সময় হয় তারা আমাকে হাসপাতালে যেতে দিয়েছিল, কিন্তু আমার মাকে যেতে দেয়নি। হাসপাতালে তখন নুরুল ইসলাম সাহেব ছিলেন দায়িত্বে। আমাদের সুফিয়া খাতুন, ওয়াদুদ সাহেব এবং সায়লা আপাও ছিলেন।

‘জয়ের জন্মটা মেডিক্যাল কলেজেই হয়। আমি যখন বন্দি, সেই অবস্থায় জয়ের জন্ম। তার নাম জয়ই আমরা রেখেছিলাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানি একজন কর্নেল আসে যখন জয়কে নিয়ে আমি ফিরে আসি আমাদের কারাগারে। আমরা ঘরের ভেতরে ও বাহিরে জানালায় দাঁড়ানো আমাকে জিজ্ঞেস করে ওর নাম কী? আমি বলি যে জয়। তখন বলে জয় মানে কী? আমি বলি জয় মানে জয়… জয় মানে ভিক্টরি। তো খুব খেপে যায় এবং এই ছোট শিশুটাকেও খুব গালি দেয়। এমনই একটি পরিবেশে জয়ের জন্ম।

‘সেখানে আমরা ফ্লোরেই থাকতাম, কোনো প্রাইভেসি ছিল না। এক তলা একটা বাড়ি। খাওয়া-দাওয়ারও কোনো ঠিক ছিল না। জয়কে নিয়ে যখন আমি একটা বাড়ির পর আরেকটা বাড়িতে সেল্টার নিই, জানি না কীভাবে বেঁচে ছিলাম। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, বাচ্চাটা যেন একটা সুস্থ্য বাচ্চা হয়। আজকে সেই জয়ের জন্মদিন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৫০ বছর আজ তার বয়স হলো। এই করোনার কারণে আমরা সবাই এক হতে পারলাম না। এটাও একটা দুঃখ। আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ এটাও কিন্তু জয়েরই চিন্তা, জয়েরই ধারণা।’

৫০ পেরিয়ে ৫১ বছরে পা দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি প্রখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দম্পতির সন্তান।

পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও পরবর্তী রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় বাবা-মার সঙ্গে জার্মানিতে অবস্থান করেন জয়। পরে মা শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে আসেন ভারতে। তার ছেলেবেলা ও প্রারম্ভিক পড়াশোনা সেখানেই।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি পান। স্নাতকোত্তর করেন দেশটির হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্নের কথা বলা হয় তার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন সজীব ওয়াজেদ।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা করা হয়। গত এক যুগে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির যে বিকাশ হয়েছে তার অন্যতম কারিগরও তিনিই।

জয়ের রাজনৈতিক জীবন অবশ্য শুরু ২০১০ সালে। বাবা ওয়াজেদ মিয়ার জন্মস্থান রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ লাভের মাধ্যমে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ভালো প্রভাব তৈরি করেন।

নেতৃত্ব ও প্রভাবের কারণে ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নির্বাচিত হন জয়।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত