বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মেড ইন বাংলাদেশ, আপনার পোশাক হোক আরও টেকসই

বিশেষ সংবাদদাতা

০৮:৫৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ০৯:০১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

৯০৫

মেড ইন বাংলাদেশ, আপনার পোশাক হোক আরও টেকসই

ফ্যাশনদুরস্ত কোনো ইউরোপীয় কিংবা আমেরিকানের, হতে পারে কানাডীয়, অস্ট্রেলীয়, কিংবা জাপানির ওয়ারড্রবে কিছু কাপড় এখন মিলেই যাবে যাতে লেখা আছে 'মেড ইন বাংলাদেশ'। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কাপড় বানিয়ে নেওয়ার কৌশল কোন দেশের ফ্যাশন বেনিয়া না ব্যবহার করে আসছে। সেতো রয়েছেই। কিন্তু শিগগিরই এই বাংলাদেশকে রিসাইক্লিংয়ের জন্যও চিনতে হবে। 

গেলো সপ্তাহে বাংলাদেশে পোশাক তৈরি করে নেওয়া এইচএন্ডএম এবং টার্গেটের মতো অতি সচল ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এদেশ থেকে কাপড়ের রিসাংক্লিং করার এক উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন মিডিয়া ফাস্টকোম্পানি.কম লিখছে, এই উদ্যোগকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে  সুইডিশ অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডা। অন্য রিসাইক্লিং প্রচেষ্টা থেকে এর ভিন্নতার দিকগুলো হচ্ছে- এই উদ্যোগে সামিল করা হয়েছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় বড় খেলুড়েদের। বড় ব্র্যান্ড, অতিকায় কারখানা, বৃহৎ কোম্পানি এর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। সম্মিলিতভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো চায়- বাংলাদেশই পোশাক রিসাইক্লিংয়ে নেতৃত্ব দিক। ফাস্টকোম্পানির নিবন্ধে এলিজাবেথ সেগরান লিখেছেন, এমনটাই ঠিক আছে: বিশ্বে এখন তৈরি পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম। আর চলতি ফ্যাশনে পোশাক সরবরাহতো সকল দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে এখন বাংলাদেশের ধাতেই পরিণত হয়েছে।    

বলা হচ্ছে, নতুন নতুন কাপড় তৈরিতে ধরিত্রী ধবংস হচ্ছে। আর ব্যবহার করা হবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের কাপড় ফেলে রাখছে মানুষ। এই সব কাপড়ের ১ শতাংশেরও কম উপদান রিংসাইকেলড হয়ে এসেছে। সিনথেটিক ফাইবার বা সুতি কাপড়ের কাঁচামালের নির্যাস বের করার প্রক্রিয়া এবং সেগুলো জাহাজ বোঝাই করে এক দেশ থেকে আর দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই কার্বন নিঃস্বরণের নানা বাধ্যবাধকতা থাকছে। আর এ কারণে বিশ্বের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে নিতে হচ্ছে কার্বন নিঃস্বরণের ১০ শতাংশের দায়। গবেষকরা দেখেছেন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের ব্যবহারই পারবে তৈরি পোশাক খাতের এই কার্বণ নিঃস্বরণের বদনাম ঘোচাতে। তবে ঠিক কতটা কমানো সম্ভব হবে তা নির্ভর করাে, রিসাইক্লিংয়ের কোন পদ্ধতিটি নেওয়া হচ্ছে তার উপর।  

ব্যাপক আকারে রি-সাইক্লিংয়ের এই পরীক্ষা চালানো জন্য প্রধান স্পটটি বাংলাদেশই হতে পারে। স্বল্প মজুরির জন্য চলতি ফ্যাশনের উৎপাদন গন্তব্য বাংলাদেশ, তাতে সন্দেহমাত্র নেই। এর মানেই হচ্ছে এখানে প্রচুর সস্তা, নিম্নমানের কাপড়ও তৈরি হয়, এবং তা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে স্বল্প সময়েই বর্জ্য কিংবা আবর্জনায়ি পরিণত হয়। আর এই সস্তা শ্রমের মূল্যো কিন্তু কম নয়। উচ্চমাত্রার মানবমূল্যও এ জন্য চুকাতে হয় বাংলাদেশকে। অধিকাংশ শ্রমিকই ভয়ঙ্কর কর্মপরিবেশে কাজ করে, উচ্চ ঝুঁকিতে। কারখানা ধসে পড়ে, আগুনে পুড়ে হাজার হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এই দেশে। আর সস্তার তিন অবস্থা তো আছেই। উৎপাদন ত্রুটির কারণে তৈরি করা কাপড় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তা কারখানার ফ্লোর বোঝাই হয়ে পড়ে থাকছে। সুতরাং অনেক অর্ডার করা পোশাক তৈরির পরেও বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। সেগুলো রয়েছে, আর তাছাড়া নিয়মিত উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্য থেকেও থেকে যাচ্ছে সকল উচ্ছিষ্ট কাপড়। সেগুলোরও একটা হিল্লে হওয়া প্রয়োজন। কোভিড-১৯ এই সমস্যাকে আরও জোরদার করেছে। অনেক ব্যান্ড তাদের অর্ডার বাতিল করায় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি এই অতিমারির বড় শিকার তাতে সন্দেহমাত্র নেই। গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডার মতে, এখন ফ্যাক্টরিগুলো বোঝাই হয়ে আছে এমন তৈরি পোশাক আর উচ্ছিষ্ট কাপড়ে। এই রিসাইক্লিং প্রকল্পের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, এগুলো সংগ্রহ করা, এবং সেগুলোকেই আবার নতুন কাপড়ে পরিণত করা। 

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে কার্বন নিঃস্বরণ কমানোর এই উদ্যোগ, নিঃসন্দেহে গোটা ধরিত্রীর জন্য ভালো, তবে এই প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের জন্য আরও বেশি ভালো, এলিজাবেথ সেগরান তার নিবন্ধে এমনটাই লিখেছেন। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য শিকার এই বাংলাদেশ। বিশেষ করে সমুদ্রের স্তর বেড়ে যাওয়া, বন্যা ইত্যাদি বাংলাদেশকেই বড় ক্ষতির মুখে ফেলবে। 

এই পুরনো পোশাককে নতুন পোশাকে রূপ দেওয়ার অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তি এখন বাজারে মিলছে। যার মধ্যে রয়েছে ফাইবারগুলোকে পলিমারে পরিণত করে ফের সেগুলো বুনন করা। বাংলাদেশে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩টি টেক কোম্পানিকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে লেনজিং, রিনিউয়েল'র মতো কোম্পানিও। লেনজিং কাঠের মন্য থেকে তৈরি কাপড়গুলো রিসাইকেল করে। রিনিউয়েলে আংশিক বিনিয়োগ রয়েছে বৃহত্তম পোশাক ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম'র। তবে এই বড় বড় রিসাইক্লার পার্টনাররা ছোট ছোট ব্র্যান্ড ও প্রকল্পগুলোকে সাথে নিয়ে কাজ করে। এতে পুরো প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হয়।     

এই প্রক্রিয়ায় গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডা মেলবন্ধনের কাজ করছে। তারা বড় বড় রিসাইক্লারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তুতকারকদের যোগাযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে যাতে কারখানা মালিকরা তাদের কাজে সম্পৃক্ত করে নিতে পারে। রিসাইক্লিংয়ের জন্য কাপড়গুলো সংগ্রহে ব্র্যান্ডগুলো ভূমিকা রাখবে। এভাবে বিভিন্নভাবে সকলের সক্রিয়তায় কাজটি পূর্ণতা পাবে, যা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এদিকে পরিবেশবাদীদের অব্যহত ক্যাম্পেইনে এখন ভোক্তা পর্যায় থেকেই ব্র্যান্ডগুলোর ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে, তারা যেনো পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই উপাদানে তৈরি পোশাকই তাদের জন্য সরবরাহ করে। এতে এখন এডিডাস বাধ্য হচ্ছে রিসাইকেলড প্ল্যাস্টিক ব্যবহারে আর এইচএন্ডএম বিনিয়োগ করছে রিসাইক্লিং প্রযুক্তিতে। ফ্যাক্টরিগুলোও এখন আধুনিক রিসাইক্লিং প্রযুক্তিগুলোর কথা জানে। আর মাঝখানে গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডা তার ভূমিকা রেখে সকল কাজের সমন্বয় করছে।

এই প্রকল্প দুষণ কমাতে এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে কার্বন নিঃস্বরণের বদনাম থেকে বের করে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে তার চেয়েও বড় কথা এর মাধ্যমে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি লাভবানও হতে পারবে।  রিসাইক্লিং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে, অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে রিসাইকেলড পোশাক মিলবে। এলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের একটি হিসাব দেখাচ্ছে, ব্র্যান্ডগুলো যখন তাদের অবিক্রিত কাপড়গুলো ঝেঁটিয়ে বের করে তার মূল্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সুতরাং আর্থিক দিকটাও গুরুত্বপূর্ণ।   

তবে এর পরেই টেকসই উন্নয়নবিদরা এই রিসাইক্লিংয়ে শেষ রক্ষা দেখছেন না। তারা বলছেন, বিশ্বে কাপড়ের ব্যবহার যদি বাড়তেই থাকে, আর এইসব ফ্যাশন ব্র্যান্ড যদি তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন পিস কাপড়ের অর্ডার দিতেই থাকে, ধরিত্রীর ক্ষতি বাড়তেই থাকবে। সুতরাং রিসাইক্লিংয়ের পাশাপাশি ভোক্তাকে পোশাক কম কিনতে হবে। এবং একই কাপড় বেশি দিন ধরে পরতে হবে। আর ব্র্যান্ডগুলোকে এমন কাপড় ডিজাইন করতে হবে যা টেকে বেশি দিন। যা এই ফ্যাশনদুরস্ত সময়ে কেউ মানতে চায় না।  

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত