শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ডোনারকে ২ লাখ দিয়ে ১৫-২০ লাখে কিডনি বেচতো চক্রটি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

২০:০৬, ১২ অক্টোবর ২০২১

৬৬৬

ডোনারকে ২ লাখ দিয়ে ১৫-২০ লাখে কিডনি বেচতো চক্রটি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে কিডনি কেনাবেচার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে বাহিনীটি জানতে পেরেছে, আটককৃতরা কিডনি বিক্রির একটি চক্রের সদস্য, যারা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে।

র‌্যাব জানায়, কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকাও দিতো না চক্রটি। গ্রহীতার কাছ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ১৫-২০ লাখ নেয়া হলেও ডোনারকে দেয়া হতো ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। ঠকানো হতো গ্রহীতাকেও।

কিডনি বিক্রি চক্রের পাঁচজনকে সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জয়পুরহাট ও রাজধানীর নর্দা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন কিডনি বিক্রি সিন্ডিকেটের অন্যতম মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ। অন্যরা হলেন মেহেদী হাসান, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও তাজুল ইসলাম অরফে তাজু।

এসময় তাদের কাছ থেকে কিডনি দাতাদের চারটি পাসপোর্ট, মেডিক্যাল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

কিডনি বিক্রি চক্রটির বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানা অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি ক্ষেত্রে বিশেষ গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছেন। আইনবহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। সিন্ডিকেট সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করতো। সেই সঙ্গে অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছিল। তাদের কার্যক্রমে গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হচ্ছিল।

খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন এবং তারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে।

র‌্যাব জানায়, চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

আর তৃতীয় গ্রুপটি ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারকে প্রতিবেশী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

র‌্যাব জানায়, এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে কিডনি ডোনারদের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করে। এরপর হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের নিকট হতে ১৫ হতে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করত। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে অগ্রিম ২ লাখ টাকা প্রদান করত। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত।

র‌্যাব জানায়, চক্রের মূল হোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ ও ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করত। আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য চক্রটি কোনো প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমাণ ভুক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকত। চুক্তি অনুযায়ী, সব অর্থ না দিয়ে এবং ভয় ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের চুপ রাখার চেষ্টা করা হত।

র‌্যাব আরও জানায়, চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম আসামি শাহরিয়ার ইমরান প্রতিবেশী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করেন। অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা হতে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন তিনিই।

র‌্যাব বলছে, ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামক দুটি পেজের অ্যাডমিন। এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রয়ের জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে প্রতিবেশী দেশে পাচার করেছেন।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আব্দুল মান্নান ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করতেন। এর আগেও এই অপরাধের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ছয়টির বেশি মামলা রয়েছে। তাজুল ইসলাম অরফে তাজু মান্নানের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন; তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান প্রতারণার শিকার কিডনি ডোনারদের ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, মেডিক্যাল ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করতেন। এ কাজে তারা জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করতেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটি কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রতিবেশী দেশে কিডনি চিকিৎসায় সহায়তার নামে ভয়ঙ্কর কিডনি কেনা-বেচার সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছিল। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত