মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১ || ১২ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কাঁদছে রোয়াংছড়ি, ঘুমাচ্ছে প্রশাসন, আদালতের আদেশ থানায় বন্দি

কমল দাশ, রোয়াংছড়ি ঘুরে এসে

১১:২৮, ৮ মে ২০২১

আপডেট: ১১:৩৩, ৮ মে ২০২১

২৪৬৯

কাঁদছে রোয়াংছড়ি, ঘুমাচ্ছে প্রশাসন, আদালতের আদেশ থানায় বন্দি

পাথর খেঁকোদের কবল থেকে রক্ষা পেতে হাঁহাকার করে কাঁদছে বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং থেকে বিভিন্ন ঝিরি-ঝরনা ও ছড়া। ঝিরি-ঝরনা ও ছড়া অবৈধভাবে প্রাকৃতিক পাথর তুলে পাচারকারিরা অবাধে পাচার করছে। সড়কের ধারে পাথরের বিশাল বিশাল মজুত (ডিপো) এবং ক্র্যাচিং মেশিনে দিনে-রাতে প্রকাশ্যে পাথর ভাঙা হলেও প্রশাসনের কোনো বিকার নেই। 

ভ্রাম্যমান আদালতে মাঝে মাঝে পাথর জব্দ করা হলেও কয়েকদিন পর সেগুলোও পাচারকারিরা তুলে নিযে যায়। শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে এসব কথা জানা যায়। আর সচক্ষে দেখা যায় কাঁপছে বোমা মেশিন নামক দানব যন্ত্রের শব্দে চারপাশের পাহাড় ঝিরি। 

প্রশাসন নাকি টাকার বিনিময়ে 'নাকে খাঁটি সরিষার তৈল দিয়ে ঘুমিয়ে আছে' এলাকাবাসীর অভিযোগ। যার ফলে রোয়াংছড়ির পাহাড় ঝিরির আহাজারি তাদের কানে  পৌঁছাচ্ছেনা, মত তাদের।

আলেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে কথা হচ্ছিলো। তিনি বললেন, পাথর তোলা হচ্ছে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের বেক্ষ্যংঝিরি ও শুকনো ঝিরি ও আশেপাশের ঝিরি-ঝরনা থেকে। তুলে আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লাপাইংগংপাড়া এলাকায় মজুত করে ক্র্যাচিং মেশিনে ভেঙে পাচার করা হচ্ছে।

"পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কারও কথা শোনে না। অথচ পাথরের পাচারের পরে ওই ঝিরি-ঝরনাগুলো শুকিয়ে গেলে পরিবেশ বিপর্যয়ে পুরো এলাকাটি বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে," আকুতি ঝড়ে এই পাহাড়ি চেয়ারম্যানের কণ্ঠে। 

লাপাইংগংপাড়ার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন পাথর পাচারের একটি বড় চক্র রয়েছে। সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারি প্রশাসনের কেউ কেউ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন।

তাদের একজন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় পানির তীব্র সংকটের মুখে স্থানীয় মানুষ। অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে বন উজাড় হয়ে গেছে। এর ফলে পানির উৎস যেমন ঝিরি, খাল শুকিয়ে যাচ্ছে। পাথর উত্তোলনের ফলে এলাকাবাসী পানির গভীর সংকটে পড়বে আর পরিবেশও ভারসাম্য হারাবে।

সরেজমিন দেখা যায়, রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর থেকে সাত কিলোমিটার দুরে লাপাইংগংপাড়া-সাধু হেডম্যানপাড়া সড়কে বিশাল বিশাল পাথরের স্তুপ। সেখানে একদল শ্রমিক ঝিরি-ঝরনা থেকে ট্রাকে বোঝাই করে পাথর নিয়ে আসছেন। আরেক দল ক্র্যাচিং মেশিনে অবিরাম পাথর ভাঙছেন। তৃতীয় আরেকটি দল ভাঙা পাথরগুলো ট্রাকে বোঝাই করে উপজেলা সদরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। পাথর উত্তোলন, ক্র্যাচিং মেশিনে ভাঙা ও পাচার করে নিয়ে যাওয়া-সবকিছু নিরাপদে ও অবাধে চলছে।
   
পাথর ভাঙা শ্রমিক সদ্দার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাস ধরে পাথর উত্তোলন, ভাঙা ও পরিবহনের কাজ চলছে। আশরাফুল ইসলাম মূল সওদাগর হলেও উত্তোলন, ভাঙার কাজ করেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। শ্রমিকরা জানিয়েছেন বৃষ্টিপাত হলে কাজ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা রাত-দিন অবিরাম পাথর ভাঙছেন। বর্তমানে প্রতিটি স্তুপে ২০ হাজার ঘনফুটের বেশি পাথর রয়েছে।

কথপোকথনে আরো জানা গেলো, এ কাজে জড়িতরা কেউ কেউ সাংবাদিক হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। এজন্য তাঁরা সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে প্রায় চার হাজার ফুট পাথর ও দুইটি ক্র্যাচিং মেশিন জব্দ করা হয়েছিল। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের দুই সদস্যের জিম্মায় পাথর ও মেশিন রাখা হয়। কিন্তু বর্তমানে জব্দকৃত পাথর ও  মেশিন কোনো কিছুই নেই। 

আলেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও লাপাইংগংপাড়াবাসী সাহ্লা অং মারমা তাদের কাছে জিম্মায় দেওযা ভ্রাম্যমান আদালতের জব্দকৃত পাথর ও ক্র্যাচিং মেশিন পাচার হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। পাচারের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাহ্লা অং বলেন, তিনি জানানোর সময় পাননি। এখন তার ওয়ার্ডে পাথর উত্তোলন, ভাঙানো ও পাচারের ব্যাপারে তার জানা নেই বলেও তিনি জানান।
 
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল্যাহ আল জাবেদ বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পাথর পাচারের গাড়ি আটকে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আটকের পর তিনি পাথর ও ট্রাক জব্দ করে নিয়ে আসবেন।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত