এমপিপুত্রের নেতৃত্বে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ স্থান থেকে ট্রাকযোগে প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত পাঁচ ট্রাক লোহা চুরি হয়েছে। এ খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়ায় এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে গুরুতর জখমের অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার দুপুরে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প সংলগ্ন নতুনহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যবসায়ীর নাম সোহেল রানা (৪৫) । তিনি প্রকল্পের সাব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলা পাওয়ার সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। 

ঘটনার পর প্রকল্পের নিরপত্তা কর্মীরা লোহাসহ পাঁচটি ড্রাম ট্রাক আটক করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল রানা জানান, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাসের ছেলে দোলন বিশ্বাস এবং তার সহযোগীদের সিন্ডিকেট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এলাকার নির্মাণকাজে ব্যবহৃত লৌহ সামগ্রী অবৈধভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে পাঁচটি ড্রাম ট্রাকযোগে  প্রকল্প এলাকা থেকে বের করার চেষ্টা করছিল।

তিনি বলেন, বিষয়টি আমার ও সহকর্মী কামরুল হাসান রাসেলের নজরে আসলে, আমরা প্রকল্পের প্রশাসনিক বিভাগকে জানাই। দায়িত্বরত প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে লৌহ সামগ্রী ভর্তি ওই পাঁচটি ট্রাক আটক করে। এসময় ট্রাক চালকদের নিকট বৈধ গেট পাস এবং চালানপত্র না থাকায় তাদের প্রকল্প এলাকা থেকে বের হতে না দিয়ে আটকে দেয়া হয়। পরে প্রকল্প থেকে লৌহ সামগ্রী বের করতে না পারার খবর এমপিপুত্র দোলন জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয় এবং ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নতুনহাট এলাকায় আমাদের বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের অফিসে হামলা করে।

সোহেল আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা অফিসে ঢুকেই কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ভাঙচুর এবং আমাকে লোহার রড দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এসময় কোম্পানির নারী কর্মীরা ছুটে এসে আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে তারা চলে যায়।

বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান রাসেল বলেন, রূপপুর প্রকল্পে আমাদের দীর্ঘদিন যাবৎ স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্লিনিং সার্ভিস পরিচালনা করে আসছে। প্রকল্প এলাকা থেকে জাল কাগজ তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে দোলনের অনুসারী একটি চক্র মালামাল পাচার করে বিক্রি করে। এ চক্রের হয়ে প্রকল্প এলাকায় কাজ করেন সাব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিকিমথ এর দোভাষী নাজমুল ও অমিত। তারা প্রতিনিয়ত ঈশ্বরদী শহরে দোলনের সঙ্গে পরিকল্পনা করে প্রকল্পের মালামাল লুট করে আসছে।

রাসেল আরো জানান, যেহেতু আমরা প্রকল্পে ক্লিনিং সার্ভিস দেই এ কারণে কোনও কিছু খোয়া গেলেই কতৃপক্ষের নিকট আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। নিজেদের স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে আমারা এ চক্রের অপকর্ম প্রশাসনকে অবহিত করায়, চক্রটি হাতে নাতে ধরা পড়ে। ফলে দোলন ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের হত্যার চেষ্টা চালায়। আমাকে না পেয়ে আমার স্ত্রী শারমিনা ইয়াসমিনকে গলাকেটে হত্যার হুমকিও দিয়েছে তারা।

রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ঘটনার পর গুরুতর আহতাবস্থায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেলকে নিয়ে ভয়ে আমরা ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে পারিনি। পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করলে সেখানেই দোলনের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের পিছু নেয়। প্রাণভয়ে আমরা ঢাকার পথে রওনা হয়েছি। আমাদের প্রতিনিধি থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুসের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি। রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্প এলাকা থেকে এমপিপুত্র দোলনের অনুসারী জয়নগর এলাকার ফরিদ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা থেকে বিভিন্ন মালামাল মাঝে মধ্যে বের করা হয়। তবে তা বৈধ না অবৈধভাবে তা আমার জানা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাও এ চক্রের কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন।

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর জানান, বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের অফিসে হামলা এবং এক ব্যক্তিকে জখমের খবর পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

তবে  লোহা চুরি চক্রের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে দোলন বলেন, রূপপুর প্রকল্পের মতো একটি সুরক্ষিত এলাকা থেকে মালামাল চুরি অসম্ভব কল্পনা। রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই আমাকে জড়িয়ে অসত্য অভিযোগ করা হচ্ছে।