শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আম্পান-যশের ঘা না শুকাতেই উপকূলে জোয়ারের তান্ডব 

নিজাম উদ্দিন

১৭:২৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

৪০৪

আম্পান-যশের ঘা না শুকাতেই উপকূলে জোয়ারের তান্ডব 

লক্ষীপুরের মেঘনার উপকূলীয় এলাকা কমলনগর এবং রামগতির বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে ওই এলাকার অবকাঠামোগুলোও বিধ্বস্ত ও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ঘুর্ণিঝড় আম্পান ও যশের কারণে বেশকিছু সড়ক, কালভার্ট এবং অবকোঠামো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের হিসেব মতে, গত বছর আম্পানে রামগতি ও কমলনগরে প্রায় একশ কিলোমিটার রাস্তাঘাট নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ দুর্যোগে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে তিন কোটি ৬২ লাখ টাকার। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ যশ’এ রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার। আর ৬২ লাখ টাকার অবোকাঠামো ক্ষতি হয়েছে।     

ক্ষতিগস্ত এসব অবকোঠামো, রাস্তাঘাট এবং কালভার্টের সংস্কার না করতেই উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের তান্ডব শুরু হয়েছে। মেঘনার অতিরিক্ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে চলাচলের রাস্তাগুলো নষ্ট করে দিয়ে যাচ্ছে। 

বিধ্বস্ত গ্রামীন সড়ক এবং কালভার্ট গুলোর জায়গায় এখন বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা উপকূলীয় বাসিন্দাদের। 

চরমার্টিন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বলিরপোল-নাছিরগঞ্জ সড়কের বাত্তির খালের ওপর অবস্থিত প্রায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে বহুকষ্টে পার হচ্ছিলেন সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা রহিমা বেগম। কিন্তু বিগত এক বছর আগে সাঁকোটির স্থানে একটি বড় আকারের কালভার্ট ছিল। 

গেল বছরের মে মাসে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মেঘনার অতিরিক্ত জোয়ারের পানির তোড়ে কালভার্টটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়দের উদ্যোগে সেখানে একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। রহিমা বেগম বলেন, সাঁকো পার হতে খুব কষ্ট এবং ভয় লাগে। তাই একেবারে প্রয়োজন ছাড়া বের হইনা।

স্থানীয় জামাল উদ্দিন, আজাদ, নুর ইসলাম ও আবুল কালামসহ অনেকে বলেন, বলিরপোল-নাছিরগঞ্জ সড়কের অত্যন্ত চারটি স্থানে বিধ্বস্ত হয়েছে। এলাকাবাসী এখন সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করে। তবে বৃদ্ধ এবং শিশুরা পুরোপুরি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া এলাকায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সড়কটি দিয়ে পূর্বে যান চলাচল করলেও এখন সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এক বছর থেকে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে সড়ক সংস্কার বা কালভার্ট নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। 

আম্পানের কারণে গেল বছর কমলনগরের কাদির পন্ডিতের হাট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন লরেঞ্চ-নাসিরগঞ্জ সড়কের একটি কালভার্ট বিলীন হয়ে যায়। ওই স্কুলে যাতায়াতে ব্যবহৃত খালের উপর থাকা আরও দুটি কালভার্টও জোয়ারের পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয়। এবার অতিমাত্রায় জোয়ারের পানি কাটাখালী খালে প্রবেশ করায় লরেঞ্চ-নাছিরগঞ্জ সড়কের স্কুল সংলগ্ন অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, গত বছর আম্পানে ব্রীজ বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে মাটি ফেলে পুনরায় রাস্তা মেরামত করা হয়। এখন আবার খাল সংলগ্ন লরেঞ্চ-নাছিরগঞ্জ সড়কের ভাঙন শুরু হয়ছে। গত কয়েকদিনে প্রায় অর্ধেক সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। খালের পাশে থাকা হাজীপাড়া জান্নাতুল ফেরদৌস জামে মসজিদটিও এখন হুমকির মধ্যে রয়েছে।

কালকিনি এলাকার জেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তাদের এলাকার যাতায়াতের রাস্তার তিনটি স্থানে জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। প্রতিদিন হাজারের উপরে লোক সেখান দিয়ে চালচল করে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ছোট আকারের যানবাহনও চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। তাই অতি প্রয়োজনেও প্রায় দেড় কিলো মিটার পথ পায়ে হেটে যেতে হয়। 

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আবু ছায়েদ বলেন, মেঘনা নদী সংলগ্ন কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন, কালকিনি, সাহেবেরহাট, লরেঞ্চ, ফলকন ও পাটওয়ারীরহাট ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকার মেঘনী নদী উপক‚লে অবস্থিত। এসব এলাকায় তীররক্ষা বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি খুব সহজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নষ্ট হচ্ছে।

চরমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী বলেন, জোয়ারের পানির স্রোতে আমার এলাকার বেশকিছু কাঁচা এবং পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। সেগুলোর তালিকা তৈরী করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের যে প্রকল্প পাশ হয়েছে, অচিরেই সে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে না।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, উপকূলীয় ৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা তৈরী করে জমা দিয়েছেন।  

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) লক্ষীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলম পাটওয়ারী বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্পান ও যশে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কোন বরাদ্দ না আসায় সংস্কার করা যায়নি।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত