শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০ || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

নবজাতক অকালমৃত্যুর ১৯ শতাংশই অকালজাত 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৮:৩৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

৯৭২

নবজাতক অকালমৃত্যুর ১৯ শতাংশই অকালজাত 

নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাসে বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১৪-এর তথ্য অনুযায়ী, নবজাতকের মৃত্যুহারে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে উদ্বেগের বিষয়, বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এ হার আগের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে আসছে। 

বাংলাদেশে প্রতি ১,০০০ জীবিত নবজাতকে ৩০ জন অকালমৃত্যুর শিকার হয়। এদের মধ্যে ১৯ শতাংশ মারা যায় অকালজাত জন্ম (প্রিম্যাচিওর বার্থ) এবং জন্মকালীন কম ওজনের (লো বার্থ ওয়েট) কারণে।  দেশে অকালজাত জন্ম এবং জন্মকালীন কম ওজনের সমস্যা, সমাধান ও উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান বক্তারা। ৩ ফেব্রুয়ারি, আইসিডিডিআর, বি’র মহাখালি কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত আইসিডিডিআর, বি’র রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকারস (আরডিএম) প্রকল্প এবং ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই)। 

সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নবজাতক স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ এবং আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান ডা. সায়েদ রুবায়েত। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আইসিডিডিআর, বি’র ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর এবং আরডিএম প্রকল্প প্রধান ডা. শামস এল আরেফিন। 

এতে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বি’র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান। ১৪ জন গণমাধ্যমকর্মী এই সভায় অংশ নেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউএসএইড বাংলাদেশের সিনিয়র মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাডভাইজর ডা. কান্তা জামিল। 

বক্তারা জানান, অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ শিশুর অকালজাত বা প্রিম্যাচিওর জন্ম (গর্ভে ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে) এবংজন্মকালীন ওজন ২.৫ কেজি বা ২,৫০০ গ্রামের নিচে হওয়া। প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫৭৩,০০০ নবজাতক প্রিম্যাচিওর অবস্থায় এবং ৮৩৪,০০০ নবজাতক কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। এদের মধ্যে ১৯২,০০০ নবজাতকের জন্মকালীন ওজন হয় ২ কেজি বা ২,০০০ গ্রামের নিচে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে প্রতিবছর ১৭,১০০ নবজাতক এ দুই কারণে মারা যায়। যাদের ৭২ শতাংশের জন্মের প্রথম দিন পূর্ণ করার আগেই মৃত্যু হয়।

এ ১৭,১০০ নবজাতক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পরিবার কোনও ধরনের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে না। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ মৃত্যু ঘটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সহজে বাস্তবায়নযোগ্য বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন-অ্যান্টিনেটাল কর্টিকোস্টেরয়েড (এসিএস), ক্যাংগারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) এবং স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট (স্ক্যানু) ইতোমধ্যে এ মৃত্যুরোধে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। 

তবে নবজাতকের জন্মকালীন ওজন নির্ণয়ের মাধ্যমে তাকে কম ওজনের হিসেবে চিহ্নিত করার যে পদ্ধতি, সেই প্রস্তুতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অপ্রতুল। বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, দেশের মাত্র ৬৯% শতাংশ জেলা হাসপাতাল এবং ৬৫% উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ ওজন পরিমাপক স্কেল আছে। 

দেশের মাত্র ২০০ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেএমসি সেবাদানের ব্যবস্থা আছে। যেখানে সীমিত সংখ্যক কম ওজন সম্পন্ন নবজাতক সেবা পাচ্ছে। কেএমসি দানের গুণগতমান, ফলোআপ সুবিধার অপর্যাপ্ততা এবং কম সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবস্থানের প্রবণতাও সমীক্ষায় উঠে আসে। ২০২০ সালে মাত্র ৫,৭৩১ নবজাতক কেএমসি সেবা লাভ করে, যা প্রয়োজন এমন নবজাতকের সংখ্যার মাত্র এক শতাংশ।

ডা. এহসান বলেন, যদিও নবজাতকের মৃত্যুরোধে কেএমসি অত্যন্ত উপযোগী। তবে একে কম ব্যয়সাপেক্ষ ও সহজ সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এ পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগের জন্য চাই দীর্ঘসময় শিশুকে মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে সেবাদানেএবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।  ফলে আপাতদৃষ্টিতে একে সহজ সমাধান মনে হলেও এর বাস্তবায়নে প্রয়োজন আরো বেশি মনোযোগ।

ডা. রুবায়েত বলেন, জীবনরক্ষাকারী সব পদ্ধতি কম ব্যয়সাপেক্ষ হবে-এমনটা ভেবে নেয়া উচিত নয়। আর কেএমসি তেমনি কার্যকরী পদ্ধতি। 

বক্তারা বলেন, কোভিড-১৯ এর মতো মহামারীর সময়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  জানিয়েছে, উপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে কেএমসি দিলে নবজাতকের ঝুঁকি তৈরি হয় না। তাই, এ মৃত্যুরোধে কেএমসিসহ অন্যান্য সেবা সহজলভ্য করার পাশাপাশি এর সুবিধা সম্পর্কে পরিবার এবং কমিউনিটিকে অবহিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

টেকসই লক্ষ্যমাত্রার ৩.২ নং লক্ষ্য অর্থাৎ ‘২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতক ও অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সী শিশুর প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু বন্ধ করা। পাশাপাশি প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার কমপক্ষে ১২তে এবং প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে অনূর্ধ্ব ৫-বয়সী শিশু মৃত্যুহার কমপক্ষে ২৫-এ নামিয়ে আনা’ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

আরডিএম
ইউএসএআইডি’র সহায়তায় পরিচালিত আরডিএম একটি পাঁচ বছর মেয়াদি গবেষণা প্রকল্প। গবেষণালব্ধ তথ্য ও নীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি বিষয়ক সেক্টর প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে সার্বিক উন্নয়নের অংশীদার হওয়া এর মুখ্য উদ্দেশ্য।

আইসিডিডিআর,বি’  
আইসিডিডিআর,বি’ একটি আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯৬০ সালে স্থাপিত এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্বল্প মূল্যের সমাধান আবিষ্কার এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণালব্ধ জ্ঞানের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। গবেষণা ও চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে মানবজীবন রক্ষায় ব্রতী এ প্রতিষ্ঠান বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করছে।

ডিফরআই
ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই) মেজার ইভ্যালুয়েশনের একটি সহযোগী সংস্থা হিসেবে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে কাজ করছে। মানসম্পন্ন তথ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রকল্প, নীতি তথা স্বাস্থ্যখাতের সার্বিক উন্নয়নে ডিফরআই বিভিন্ন দেশকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা ডিফরআই’র অন্যতম লক্ষ্য।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত