শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত কবরী

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক

১৫:৩৯, ১৭ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ১৭:৩০, ১৭ এপ্রিল ২০২১

৮৬১

বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত কবরী

তার প্রস্থান অগণিত মানুষকে অশ্রুসিক্ত করেছে, তার অনুপস্থিতির ভার কেমন হতে পারে, তা অসংখ্য মানুষকে ভাবাচ্ছে গভীর বেদনায়, তার মৃত্যু সন্তানদের করেছে মাতৃহারা, সেই কিংবদন্তী অভিনেত্রী, পরিচালক ও রাজনীতিবিদ কবরী শায়িত হয়েছেন বনানী কবরস্থানের সবুজ মাটিতে, চিরনিদ্রায়।

**মিনা পাল থেকে ‘কবরী’ রূপে আত্মপ্রকাশের গল্প

শনিবার (১৭ এপ্রিল) বাদ জোহর কবরস্থান এলাকায় তার জানাজা সম্পন্ন হয়। এর আগে বনানী কবরস্থানের সামনেই মুক্তিযোদ্ধা এই অভিনয়শিল্পী ও সাবেক সাংসদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন করবীর ছেলে শাকের চিশতীসহ তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয় ও সহকর্মীরা। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল হকের পক্ষে এ শিল্পীকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। শ্রদ্ধা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ আরও বেশ কিছু সংগঠন।

করোনার সঙ্গে ১৩ দিনের লড়াইয় শেষে শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে মারা যান এই কিংবদন্তী। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

গত ৫ এপ্রিল কবরীর করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে। শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভর্তি করা হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে ৮ এপ্রিল স্থানান্তর করা হয় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। সেখানেই মারা যান কিংবদন্তী এই অভিনেত্রী। 

**চলে গেলেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী কবরী

সারাহ বেগম কবরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের চলচ্চিত্রে কবরী ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তীর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে। বাবা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল৷ তার আসল নাম ছিল মিনা পাল।

প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক আগে ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন কবরী। তারপর একের পর এক ছবি দিয়ে জয় করতে থাকেন দর্শক হৃদয়ও হয়ে ওঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে।

এছাড়াও দীর্ঘ তিন দশকের ক্যারিয়ারে 'নীল আকাশের নিচে', 'ময়নামতি', ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, 'দেবদাস'সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এসবের মধ্যে ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উল্লেখযোগ্য।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রথমে ঢাকা ছাড়তে হয় এই অভিনেত্রীকে, এর পরের ঠিকানা ভারত। কলকাতায় বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।

অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০৬ সালে ‘আয়না’ নামে একটি চলচ্চিত্রের পরিচালনার মধ্য দিয়ে নির্মাণে অভিষেক ঘটে কবরীর। ওই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন।

লেখালেখিও করতেন কবরী।তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ ২০১৭-তে একুশে গ্রন্থমেলা প্রকাশিত হয়েছে।রাজনীতিতেও জড়িয়েছেনএকসময়ে। ২০০৮ সালে নবম সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্ত থেকেছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে।

সম্প্রতি কবরী শুটিং শেষ করেছেন ‘এই তুমি সেই তুমি’ সিনেমার। সিনেমাটি পরিচালনার পাশাপাশি এর কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন তিনি। সরকারি অনুদানের এই ছবির ডাবিং ও সম্পাদনার কাজ চলছিল। 

তার মৃত্যুতে ঝরে পড়লো বাংলা সিনেমার আরেকটি নক্ষত্র। নীল আকাশের নীচে সবাইকে রেখে তিনি চলে গেলেন অনন্তলোকে, রয়ে গেল শুধু অসংখ্য স্মৃতি আর অসামান্য সব সৃষ্টি।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank